পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



706

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 সর্বত্রই তাহারা অসম সহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়া হানাদার সৈন্যদের মনোবল ভাঙিয়া দিয়া তাহাদের চরম হতাশ করিয়া চলিয়াছেন।

 শত্রুবাহিনীর চরম হতাশা এবং তাহদের মধ্যকার বেলুচ পাঠান সিন্ধি এবং পঞ্জাবীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক অন্তর্বিরোধ, মতোবিরোধ, অবিশ্বাস এবং হিংসা প্রতিহিংসা বিদ্বেষের মুখে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি দিন দিনই বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে। বর্বর হানাদার বাহিনীর প্রায় এক ডিভিশন সৈন্য বাংলাদেশে দখলকৃত এলাকা ছাড়িয়া চোরের মত ইসলামাবাদের পলায়নের মুখে গত শনিবার মুক্তিযোদ্ধাদের সদ্য ট্রেনিং সমাপ্ত অফিসারদের প্রথম দলটি বিভিন্ন রণাঙ্গনে ছড়াইয়া পড়েন। এদিকে নৌবাহিনীর ইউনিটও দিন দিন জোরদার হইয়া উঠিতেছে।

 বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচণ্ড আঘাতের মুখে শত্ররা দিশাহারা হইয়া শেষ পর্যায়ে নিরাপদে পলায়নের পথ সুরক্ষিত করার দিকে সর্বশক্তি নিয়াগ করিয়াছে বলিয়া খবর পাওয়া যাইতেছে।

 বাংলাদেশ হইতে সঙ্কটকালে বিমানে জল্লাদ সেনাদের পলায়নের সম্ভাবনা না দেখিয়া জঙ্গীচক্র ঢাকা হইতে চট্টগ্রাম ও চালনা পর্যন্ত বিস্তৃত নৌপথের উপর দখল জোরদার করিতেছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

 এদিকে বিভিন্ন রনাঙ্গণ হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, স্থল, ও নৌপথে বাংলার দুর্জয় অগ্নিসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে তিষ্টিতে না পারিয়া বর্বর খান সেনারা বিমানের সাহায্য গ্রহণ করিতেছে এবং প্রায়ই পোড়া মাটি নীতি অবলম্বন করিয়া বেসামরিক নিরস্ত্র জনসাধারনকে হত্যা করিয়া চলিয়াছে।

 দখলীকৃত এলাকায় উহাদের সদর দফতর মায় ঢাকা শহর হইতে শুরু করিয়া প্রতিটি জেলা শহর মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলি এবং তাঁহাদের দৃপ্ত পদভারে থর থর করিয়া কাঁপিতেছে। জেলার সর্বত্র হানাদার বাহিনী ও উহাদের দালালদের তাঁহারা উৎখাত করিয়া চলিয়াছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও প্রচণ্ডতা আচ করিতে পারিয়া ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহী বাংলাদেরশের দখলীকৃত এলাকায় তথাকথিত উপনির্বাচনের পরিকল্পনা আরও পিছইয়া দিয়াছে।

 রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাভিযান সর্বত্র অব্যাহত রহিয়াছে। দখলীকৃত এলাকার নোয়াখালী জেলার ফেনী, পরশুরাম, অনন্তপুর, বেলুনিয়া এবং টাঙ্গাইলে হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলিতেছে।

 ঢাকা ময়মনসিংহের মধ্যে স্থানে স্থানে রেলপথ উঠাইয়া ফেলায় এবং গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতুগুলি মুক্তিযোদ্ধারা মাইনের সাহায়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দেওয়ায় ঢাকা ময়মনসসীংহের মধ্যে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হইয়া পড়িয়াছে।

 টাঙ্গাইল এলাকায় বর্তমানে প্রচণ্ড লড়াই চলিতেছে। হানাদার সৈন্যরা এই স্থানে জঙ্গী বিমানের সাহায্য গ্রহণ করিতেছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। অবশ্য ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল শহরের উপকণ্ঠে কাগমারীতে ৫ জন খানসেনাকে খতম করিয়াছেন।

 নোয়াখালী জেলায় ও ফেনী বেলুনিয়া এলাকায় ঢাকা চট্টগ্রাম রোড নিরাপদ করার জন্য হানাদার বাহিনী মরিয়া হইয়া প্রচেষ্টা চালাইতেছে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা আঘাতের পর আঘাত হানিয়া উহাদের সকল প্রচেষ্টা ধুলিস্মাৎ করিয়া দিয়া অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন।

 ফেনী হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় এ মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা মুহুরী নদী অতিক্রম করিয়া পরশুরাম এবং অনন্তপুরে শক্তিশালী প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। খান সেনারা মরিয়া প্রচেষ্টা চালাইতেছে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা আঘাতের পর আঘাত হানিয়া ইহাদের সকল প্রচেষ্টা ধূলিসাৎ করিয়া দিয়া অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন।