পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



713

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রনাঙ্গন থেকে

(নিজস্ব প্রতিনিধি)

 গত ২০শে সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার ডিমলা থানার অন্তর্গত সুটিবাড়ী হটের পশ্চিমে জোড়জিগা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন উক্ত অঞ্চল হইতে অস্ত্রশস্ত্র রাখিয়া কোন রকমে পলায়ন করে।

 উক্ত থানার বালাপড়া গ্রামে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক রক্ষিত মাইন বিস্ফোরণে ৬ জন পাক ফৌজ নিহত হইয়াছে। প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী রাস্তায় মাইন পুতিয়া রাখিয়াছিল এবং সকালে মহিষের গাড়িতে চড়িয়া ৬ জন পাক ফৌজ যাওয়ার সময় মাইন বিস্ফোরিত হয় এবং গাড়োয়ান সমেত ৭ জন নিহত হয়। পরবর্তীকালে বর্বর পাকবাহিনী বালাপাড়া গ্রামকে সম্পূর্ণভাবে জ্বালাইয়া দেয়।

 গত ২১শে সেপ্টেম্বর বর্বর পাকফৌজ ডিমলা থানার অন্তর্গত খড়িবাড়ী গ্রামের টুনিরহাট জ্বালাইয়া দেয়। ফলে স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীর বহু সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। উক্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে।

 গত ২৮ তারিখ রাত্রে ছাতনাই গ্রামে ৭০ বৎসরের এক বৃদ্ধাকে হানাদার পিচাশাচরা নির্মমভাবে হত্যা করিয়াছে। জানা গিয়াছে যে, উক্ত বৃদ্ধার পুত্র মকবুল হোসেনকে মারার জন্য সেদিন রাত্রে জানালা দিয়া মকবুল হোসেনকে গুলি করে, কিন্তু মকবুল হোসেন সেই ঘরে না থাকায় তাহার বৃদ্ধা মাতা গুলিবিদ্ধ হইয় মৃত্যুবরণ করেন।

 দিনাজপুর গত ২৬শে সেপ্টেম্বর রবিবার দিনাজপুরের বোদা থানার অন্তর্গত মাড়েয়া গ্রামে একদল পাকফৌজ ও রাজাকার বাহিনী স্থানীয় ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটি পাড়া পোড়াইয়া দেয়। সেই সময় মুক্তিবাহিনীর জওয়ানরা তাহদের কমাণ্ডার মাহবুবের নেতৃত্বে উক্ত পাক বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে এবং একজন রাজাকরকে জীবিত অবস্থায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করিতে সক্ষম হয়। আরো প্রকাশ যে, উক্ত গ্রামে ঠাকুগাঁও মহকুমা ন্যাপের যুগ সম্পাদক সফিকুল আলম চৌধুরী ও বোদা থানা ন্যাপের সম্পাদক আবদুর রউফকে জীবিত অবস্থায় তাহাদের হাত হইতে উদ্ধার করে।

 ১লা অক্টোবর বোদা থানার অন্তর্গত পাকফৌজ অধকৃত নয়াদীঘিতে অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া পাকফৌজের ঘাঁটি ও ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত করিয়া দেয়। নয়াদীঘি ও বোদার মধ্যে সংযোগকারী ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি পুল মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া ফেলে। ফলে ভীতসন্ত্রস্ত পাক হানাদারেরা উক্ত এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করিতে বাধ্য হয়। নয়াদিঘি বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ দখলে।

 বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গত মাসের প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলারা ঢাকা জেলার রায়পুরা থানায় কয়েটি অভিযানে শতাধিক শত্রসেনা খতম করিয়াছে।

 গত ৩রা সেপ্টেম্বর রায়পুরা থানার টিডি সেক্টরি অবস্থিত শত্রুঘাঁটিটি গেরিলারা গভীর রাত্রে চতুরদিক হইতে ঘিরিয়া ফেলে। উভয়পক্ষে ছয় ঘণ্টা তুমুল সংঘর্ষে ৫০ জন পাকিস্তানী ন্যৈ ও ৬০/৭০ জন রাজাকার নিহত হয়। প্রায় ৩৪ জন দালাল অবাঙালি ইপিআর ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এই সংঘর্ষে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হইয়াছেন।

 গত ২৪শে সেপ্টেম্বর রায়পুরার আমিরগঞ্জে রেলষ্টেশনের কাছে মাইনের সাহায্যে মুক্তিবাহিনী দুইটি রেলসেতু উড়াইয়া দিয়াছে।