পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



717

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রনাঙ্গন সংবাদঃ চিলমারী রণাঙ্গন (রংপুর)

 রৌমারী ১৮ অক্টোবর- আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ, গত ১৬ই অক্টোবর অতি প্রত্যুষে বাংলার কৃতী সন্তান, মাতৃভূমির নিঃসার্থ সেবক ও অন্যতম ত্রাণকর্তা মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে বঙ্গমাতার মুক্তি পাগল সন্তানেরা ছোট্ট একটি দল অতি সামান্য কিছু অস্ত্রশস্ত্র সহকারে চিলমারী গমন করে এবং সেখানে গিয়ে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভিক্ত হয়ে চীলমারী বাজার, রসনা, থানারহাট ও বালাবাড়ী হাটে অবন্তিত দসু্য পাক বাহিনীর বর্বর ঘাঁটিগুলি আক্রমন করে এবং ৭২জন পাক সেনা (সি, এ, এফ) ও ১৬ জন রাজাকারকে নিহত করে। তারপর ৬৩ জন রাজাকারকে বন্দী করে ৫৩ টি রাইফেল, দুইটি ষ্টেনগান ও প্রায় ছয়শত গুলি হস্তগত করে। এই সব মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার লোক মুক্তিফৌজের নিকট ছুটে আসে এবং জয় বাংলা, জয় শেখ মুজিব ধ্বনি দিতে থাকে।

 বন্দী রাজাকারগণকে ও তাদের প্রধান পরিচালক কুখ্যাত পাক দালাল ও অত্যাচারী ওয়ালী মোহাম্মদকে এই অভিযানে প্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিফৌজের আঞ্চলিক সদর দফতর রৌমারিতে বেলা ১১ ঘটিকার সময় আনয়ন করা হলে হাজার হাজার লোক ছুটে আসে ও বাংলার এই সব বৈরী সন্তানদেরকে দেখার জন্য ঘিরে ফেলে। ওয়ালী মোহাম্মদের অত্যাচার ও কুকীর্তির আলোচনা করতে দর্শকজনতা কিছুক্ষণের মধ্যে মারমুখো হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক বুঝঝে কর্তৃপক্ষ তাকে ও অন্যান্য রাজাকারদের জনতার অগোচরে প্রেরণ করেন।

 একই দিনে নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আর একদল মুক্তিফৌজ রাজার ভিটায় আক্রমন চালিয়ে তিনজন পাক সেনাকে (সি, এ, এফ) ও ১৫ তজন রাজাকারকে খতম করে এবং কুখ্যাত পাক দালাল পঞ্চুমিয়াসহ ছাবিবশ জন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করে। এই অভিযানে ৩৫ টি রাইফেল ও তিন সহস্রাধিক গুলিবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। সংবাদে আরও প্রকাশ অদ্র দুপুরবেলা অন্য একজন রাজাকার চিলমারীর অন্য এক শত্রুঘাঁটি থেকে ছয়টি রাইফেলসহ পরায়ন করে এবং সন্ধ্যার কিছু পূর্বেই মুক্তিফৌজ অধিনায়কের নিকট আত্মসমর্পণ করে।

ময়মনসিংহ রণাঙ্গন

(হারুন হাবিব প্রদত্ত)

 আনন্দবাড়ী, ১৭ ই অক্টোবর- মুক্তিফৌজ গেরিলাগণ গত ১২ই অক্টোবর মোমেনশাহী জেলার ইসলামপুর জুট ট্রেডিং কর্পোরেশন গুদামে অগ্নিসংযোগ করে ৭৫ হাজার মণ পাট পুড়িয়ে দেয়। প্রকাশ থাকে যে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ফলে বহুদিন যাবত পাট গুদামজাত ছিল।

 এই তারিখে জামালপুরের উত্তারংশের ধানুয়ার মুক্ত অঞ্চলের দিকে পাক সেনারা রাতের অন্ধাকারে অগ্রসর হলে প্রহরারত স্বাধীনতা যোদ্ধাদের গুলিতে ২৭ জন পাক দস্য নিহত হয় এবং বেশ কিছুসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিফৌজের হাতে আসে। গত ১৪ই অক্টোবর গেরিলারা বাহাদুরাবাদ ঘাটের পাক ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন দসু্য সেনা ও ১৩ জন রাজাকারকে হত্যা করে। এই আক্রমণে পাক সেনাদের বহুসংখ্যক ওগালাবারুদ মুক্তি সেনারা ধ্বংস করে দেয়।

 অপরদিকে নেত্রকোনা মহকুমার কলমাকান্দা, মদন, বারহার এবং গফরগাঁও রেলওয়ে ষ্টেশনে অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে কমপক্ষে ৫০ জন পাক সেনা এবং দালালকে হত্যা করে।

(জয়নাল আবেদীন প্রদত্ত)

 মোল্লার চর, ১৭ ই অক্টোবর- পাক জল্লাদ বাহিনীর ১৯ টি বিরাট নৌকা আনুমানিক এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা মুল্যের রসদপত্র নিয়ে ঢাকার সাভার থেকে রওয়ানা দিয়ে ফুলছড়ি ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে