পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



718

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 আমাদের জলপথের অতন্দ্র প্রহরারত মুক্তিবাহিনীর বীর সেনাগণ ক্যাপ্টেন আঃ হামিদের নেতৃত্বে উক্ত রসদ বোঝাই নৌকাগুলিতে অবরোধ করে এবং মুক্ত অঞ্চলের প্রশাসকের নিকট অৰ্পন করেছে বলে প্রকাশ। 

-অগ্রদূত, ২০ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

হিসাব

(বিশেষ প্রতিনিধি)

 গত মাসে পাক-সামরিক বাহিনীর ২২ জন অফিসার ও চার হাজারের বেশী সৈন্য, রাজাকার ও বদর বাহিনীর লোক নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধরা বিভিন্ন রনাঙ্গনে প্রায় আড়াই হাজার কমাণ্ডো আক্রমনে উক্ত শত্রুদের খতম করেছেন।

 প্রাথমিক খবরে জানা যায় যে, গেরিলা যোদ্ধারা ঐ সময়ের মধ্যে ৯৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল সেতু উড়িয়ে দিয়েছেন এবং ৪৯ টি প্রাক ও জীপ ধ্বংস অথবা অকেজো করে দিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে ৯টি সৈন্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত করেছেন।

 চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরে মুক্তিবাহিনী গেরিলারা ৩টি বড় জাহাজ ও ১টি ট্যাঙ্কার হয় ডুবিয়ে দিয়েছেন অথবা ক্ষতি করেছেন। সৈন্যবাহী ১টি বড় ষ্টীমার, ১১টি লঞ্চ ও কয়েকটি গানবোটের ক্ষতি করা হয়েছে অথবা অকেজো করে দেয়া হয়েছে। এই সব অপারেশনের সময় মুক্তিবাহিনী ৯১৮টি রাইফেলসহ প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে দখল করতে সক্ষম হয়েছেন।

মুক্ত অঞ্চলের মুক্ত কথা

\পর্যটক\

 পাক হানাদারদের মনোবল হিমাঙ্কে নেমে এসেছে- রংপুর জেলার কোন একটি মুক্তাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডাণ্ট জানান। তিনি আরও বলেন, ওদের মনোবল যতই ভেঙ্গে পড়েছে আমাদের মনোবল ততই উদ্দীপ্ত হচ্ছে। দলে দলে বাংলাদেশের যুবকরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করছে। প্রয়োজনানুসারে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করতে না পারায় কয়েক হাজার শিক্ষণ গ্রহণেচ্ছ যুবককে ওয়েটিং লিষ্টে অন্তভুক্ত করে রাখা হয়েছে।

 গেরিলা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিবাহিনীর সৈনিকদের তৎপর আক্রমণের ফলে রংপুর সেক্টরে বিভিন্ন সংঘর্ষে খানসেনা ও মুক্তিবাহিনী সদস্যদের তুলনামূলক আহত ও নিহতের হার যথাক্রমে ১০০-৫ জন। বাউরা ও পাটগ্রামের মুক্তাঞ্চলে কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই সব চিকিৎসা কেন্দ্রে সর্বাপেক্ষ অভাব রয়েছে উপযুক্ত ঔষধপত্রের। মুক্তিবাহিনীর আহত সৈনিকদের প্রয়োজানানুসারে যে রক্তের প্রয়োজন তারও অভাব দেখলাম। জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বলেন বাংলাদেশ তথা তার নিপীড়িত নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল রাষ্ট্র চিকিৎসায় একটি মুক্তিবাহিনীর সৈনিকের মৃত্যু দশজন খান সেনার নিরাপত্তা লাভের কারণ হবে। কারন দশজন খান সেনার মোকাবিলা একজন মুক্তিবাহিনীর সদস্য আজ নিতে পারে। স্বাধীন দেশের সেচ্ছাসেবী প্রতিটি সৈনিকের মনোবল ভাড়াটে খান সেনাদের থেকে অনেক বেশী।

 রংপুর জেলার কয়েকশত বর্গমাইল মুক্ত এলাকায় অসামরিক প্রশাসকগন বিশেষ যোগ্যতার সাথে প্রশাসন ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলেছেন। থানা শহর পাটগ্রাম ও রেলবন্দর বাউড়ার দোকানপাট যথারীতি খোলা দেখলাম। পূর্ব নির্দিষ্টবারে পাটগ্রাম, বাউড়া ও বুড়িমারীতে সপ্তাহে দুবার করে হাট বসছে। ঐ সহ হাটে বাজারে ভারতীয় মুদ্রা অবাধে চলছে। এমন বহু দোকানদার দেখলাম যারা পাক মুদ্রা গ্রহণ করতে চাইছে না।