পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



720

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 পাক সেনারা মুক্তিফৌজকে জব্দ করার জন্য রামপুর বাজারে ওঁৎ পাতিয়া থাকে। কিন্তু জনসাধারন মুক্তিফৌজকে এই খবর জানাইয়া দেয়। ফলে, মুক্তিফৌজ উল্টা পাক সৈন্যদের উপর আক্রমণ করিয়া ৭ জন সেনা ও ১৬ জন রাজাকার খতম করে।

 পাক বাহিনী তাহাদের লেঙ্গরা বাজার ঘাঁটি সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে রামপুর, গৌরীপুর, ও রাজনগরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিগুলির উপর আক্রমণ চালাইলে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর ২৬ জন পাক সেনা ও রাজাকার খতম হয়। ইহার পর মুক্তিফৌজ পাক সেনাদের ঐ ঘাঁটিটির উপরেই আক্রমণ চালায় এবং ৩৫ জনকে খতম ও ৩ জনকে আহত করে। এই যুদ্ধে মুক্তিফৌজের (১) আব্দুল আজিজ, (২) রিয়াজুদ্দীন, (৩) আবুল হোসেন, (৪) আব্দুল হাকিম মোল্লা, (৫) পরিমল দে ও (৬) আব্দুস সালাম শহীদ হন এবং ৬ জন আহত হন।

 মুক্তিযোদ্ধারা বাসাই তোলার পুলটি উড়াইয়া দিয়াছে। রাজাকাররা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিলে মুক্তিফৌজের ঠেলায় একজন অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। বাকীরা শ্রীচরন ভরসা করিয়া পালাইয়া যায়।

নলিতাবাড়ী-হালুয়া ঘাট

 ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নলিতাবাড়ী ও হালুয়াঘাটের সংযোগ রক্ষাকারী একটি ৩০ ফুট লম্বা ব্রীজ ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। রাজাকাররা বাধা দিলে মুক্তিফৌজ একটি গুলিও খরচ না করিয়া ১টি রাইফেলসহ ৩ জনকে পাকড়াও করে।

 মুক্তিফৌজের অপর একটি দল গামাইরতলা, চেতাখালী ও চিরইভাসিনীর ব্রিজগুলি উড়াইয়া দিয়াছে।

রণাঙ্গনঃ হাজারো আঘাতেও ঢাকা মাথা নোয়াবার নয়

(রণাঙ্গন প্রতিনিধি)

 জল্লাদ বাহিনীর কড়া প্রহরা ও নিয়ন্ত্রণকে উপেক্ষা করিয়া দেশ প্রেমের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও দেশপ্রেমিক জনগণ ঢাকার সর্বাংশে তথা ঢাকা শহর, নারায়ণগঞ্জে ও ডেমরা শিল্পাঞ্চল এবং বিস্তীর্ণ গ্রামঞ্চলে সাহসিকতাপূর্ণ অভিযান চালাইয়া যাইতেছে। হাজারো আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ঢাকা মাথা নত করে নাই।

ঢাকা শহর

 গত ২৩ শে সেপ্টম্বর মুক্তিবাহিনীর অসমসাহসী একটি দল ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে পলাশী ব্যারাকে অবস্থিত পাক সেনাদের ক্যাম্পে আকস্মিক আক্রমণ চালাইয়া ২৯ জন পাক সেনাকে খতম করে। বাদ-বাকী সেনারা প্রানভয়ে পালাইয়া যায়। পূর্ব রাণঙ্গনে অবস্থিত বাংলাদেশ ন্যাপের লিয়াজো অফিস এই খবর সরবরাহ করিয়াছে।

গোদনাইল

 সম্প্রতি গোদনইল শিল্প এলাকায় এক অসমসাহসী করুণ গ্রেনেড চার্জ করিয়া ২ জন শক্রসেনাকে খতম ২টি রাইফেল ও গোলাবারুদ দখল করে। পরদিন দখলদার বাহিনী গোদানাইল বাজারটি পুড়াইয়া ছারখার করিয়া তাহাদের “বীরত্বের” পরিচয় দেয়।

বাবুরাইল

 ২২শে সেপ্টেম্বর বাবুরাইলে এক অভিযানে মুক্তিফৌজ ৪ জন রাজাকার খতম করে। ইহা ছাড়া, ঢাকা-নারায়নগঞ্জের নলখারী ব্রজটি মুক্তিফৌজ উড়াইয়া দিয়াছে। প্রতিশোধে পাক বাহিনী একই নিয়মে পার্শ্ববর্তী গ্রাম আইলখালী ও সস্তাখালী সম্পূর্ণরূপে পুড়াইয়া “বীরত্ব” প্রদর্শন করে। তাহারা শতাধিক গ্রামবাসীকে গুলি করিয়া এবং ১৫ হইতে ২০ যুবতীকে পাশবিক নির্যাতন চালাইয়া হত্যা করে ও এইভাবে “ইসলামী জেহাদ" পরিচালনার পরিচয় দেয়।