পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



721

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রূপসী

 ১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিফৌজ রূপসী বাজারের পাশ দিয়া গানবোট যোগে অগ্রসরমান ১৫ জন পাক সেনার প্রতি আক্রমণ চালাইলে পাক সেনারা পিছু হটিয়া পলায়ন করে। পরে আসিয়া তাহারা রূপসী বাজারে লুটতরাজ চালায়। এখানেই শেষ নয়, পরদিন তাঁহারা নোয়াপাড়া ও রুপসী গ্রামে অনেক বাড়িঘর ভস্মীভূত, সম্পত্তি লুট, নারী ধর্ষণ চালায়।

মনোহরদী

 সম্প্রতি মনোহরদী কাছারী হইতে চালাকচরে আসার পথে প্রায় ১ শত পাক সৈন্যের একটি দলের সহিত মুক্তিফৌজের তীব্র সংঘর্ষ হয়। মুক্তিফৌজ তাহদের আগমনের খবর পূর্বেই জানিতে পারিয়া ‘পজিশন লইয়া বসিয়া থাকে। এই খবরটি আবার দালালরা পাক বাহিনীকে জানায়। ফলে, পাক বাহিনী ২ ভাগে বিভক্ত হইয়া অগ্রসর হইতে থাকে। কিন্তু মুক্তিফৌজ এই চালাকীও ধরিয়া ফেলে। তাহারা আরও দূরে চালাকচরের নিকটে গিয়া ‘পজিশন নেয়। ফলে মুক্তিফৌজকে ঘেরাও করার জন্যরা যে বৃহ্য রচনা করে, পাক সৈনরা উল্টা সেই ফাঁদেই পড়ে। ৭ জন পাক সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়, ৪ জন আহত হয়। ইহা ছাড়া, ১০/১২ জন গ্রামবাসীও শহীদ হয়।

 মুক্তিফৌজ ঐ এলাকার কুখ্যাত দালাল হছেন গুণ্ডাকেও খতম করিয়াছে। তাহাকে হত্যা করায় স্থানীয় জনমনে স্বস্তি ফিরিয়া আসিয়াছে। 

-নতুন বাংলা, ২১ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাক সেনাদের ছাতক শহর ত্যাগ

 মুজিবনগর, ২১ শে অক্টোবর (পিটিআই) বাংলাদেশের শ্রীহট্টে ও রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধাদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে এ খবর পাওয়া গেছে।

 মুক্তি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ এখন অধিকসংখ্যক বিমান কাজে লাগাচ্ছে। পাক জঙ্গী বিমানগুলি ব্যাপকভাবে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিগুলির ওপর বোমা বর্ষণ করছে।

 রংপুর খণ্ডে মুক্তিযোদ্ধারা গত ১৭ ই অক্টোবর চিলমারী এলাকায় পাক ঘাঁটিগুলির ওপর প্রবল আক্রমণ চালালে পাক সৈন্যরা চিলমারী থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। গেরিলারা সান্তাহার ও পার্বতীপুরের মধ্যে রেল লাইন উড়িয়ে দেয়। গত ১৬ই ও ১৮ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর ভুরুঙ্গামারী এলাকায় পাক ঘাঁটির ওপরও প্রবল আক্রমণ চালায়।

  শ্রীহট্টে খণ্ডে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাক সৈন্য ও রাজাকাররা ছাতক শহর থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে পঞ্চাশেরও বেশি পাক সৈন্য ও ৬০ জন রাজাকার নিহত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এখানে কয়েকজন নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধাও প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে। অপর একটি সংবাদে প্রকাশ, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সুনামগঞ্জের ৬০ কিলোমিটার উত্তরে এগিয়ে গেছে। মৌলভীবাজারের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম মুক্ত হয়েছে বলেও খবর এসেছে।

 চট্টগ্রাম খণ্ডঃ এখানে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল চাপ সৃষ্টি করে পাক অসামরিক বাহিনীকে নাজেহাল করে তুলেছেন। গত ১৭ই অক্টোবর গেরিলারা পাক অসামরিক বাহিনীর একটি ইউনিকে ঘিরে ফেলে। এই সংঘর্ষে বহু পাক সেনা হতাহত হয়।