পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



724

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 মুক্তিবাহিনী গেরিলারা কুষ্টিয়া জেলায় জীবননগর এবং গনজারি এলাকায় তার সরিয়ে এবং খাম্বা তুলে ফেলে টেলিযোগাযোগ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। ২১ শে আক্টোবর কুষ্টিয়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বোমা বিস্ফোরণের ফলে কুষ্টিয়া এবং ঢাকার মধ্যে টেলিফোন সংযোগ প্রায় আধাঘণ্টা বিচ্ছিন্ন থাকে এবং এক্সচেঞ্জেরও বিশেষ ক্ষতি হয়েছে।

শান্তি কমিটির সভাপতি নিহত

 করিমগঞ্জ, ২৩শে অক্টোবর- আজ সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ,মুক্তিবাহিনী ২১শে অক্টোবর রাতে বাংলাদেশের সুলতানপুরে তথাকথিত শান্তি কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদগ চৌধুরীকে হত্যা করেছে।

 প্রকাশ, মিঃ চৌধুরী করিমগঞ্জ সীমান্তের পাক নাশকতাকারীদের পরিচালিত করছিলেন এবং গুপ্তচরদের শিক্ষণের ব্যবস্থা করছিলেন।

 গত ২০ শে অক্টোবর পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন ডিগবাইল সারি নদী পার হচ্ছিল, তখন মুক্তিফৌজ অতর্কিত আক্রমণ করে গানবোটটা ডুবিয়ে দেয়। ফলে পাঁচজন পাক সৈন্য মারা যায়। ১৮ই অক্টোবর দক্ষিণ ছাতক এলাকায় মুক্তিফৌজ তিনটি লঞ্চ এবং তিনটি স্পীড বোট ডুবিয়ে দেয় এবং বহু পাক সৈন্য হতাহত হয়।

 টহলদার দলকে আক্রমণ করে এবং দুজন সৈন্যকে হত্যা করে। মাতুয়া এলাকায় হানা দিয়েও তারা দুজন পাক সৈন্যকে খতম করে। গত ১৬ই অক্টোবর নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়ায় সাতজন পাক সেনা নিহত এবং অপর সাত জন আহত হয়।

 রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী এলাকায় মুক্তিফৌজ গেরিলারা অমরখানা এলাকায় চারজন পাক সেনাকে হত্যা করে। যশোরের শিমলা এলাকায় দুজন পাক সৈন্য নিহত এবং দুটি রাইফেল উদ্ধার করা

হয়েছে। 

-যুগান্তর, ২৪ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

ফেনী এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে, কুমিল্লা কয়েকটি অঞ্চল মুক্ত

 মুজিবনগর, ২৪শে অক্টোবর- এখানে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় যে, মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাক ঘাঁটিতে হানা দিয়ে প্রায় ৮০ জন পাক সৈন্যকে খতম করেছেন। এছাড়া মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা এবং ভেড়ামারা অঞ্চলে কয়েকটি আক্রমণ চালিয়ে পাক বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে। সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায় যে, মুক্তিবাহিনীর আক্রমনের ফলে এই সব অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নতুন সৈন্য পাঠানোর ব্যবস্থা বানচাল হয়ে গেছে। পদ্মা এবং মাথা ভাঙ্গা নদী দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা আটুট রাখার চেষ্টায় গত কয়েক দিনে পাক বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সৈন্যরা কৃষ্ণনগর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ভেড়ামারায় সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদবাহী দুটি স্পীড বোট আক্রমণ করে ডুবিয়ে দেয়। ১০ জন খান সেনা নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গায় একটি রেললাইন উড়িয়ে দেয়, ফলে পাক সৈন্যদের জন্যে খাদ্যবাহী একটি মালগাড়ী লাইনচ্যুত হয়। পাক সেনারা বেপরোয়া গুলী চালায়, ফলে কিছু সংখ্যক বাঙ্গালী কুলী নিহত হয়। মুক্তিবাহিণী কুষ্টিয়া এবং দর্শনার মধ্যে টেলিফোন লাইন নষ্ট করে দিয়েছে।