পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



725

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 কুমিল্লা রণাঙ্গনে আগরতলা, ২৪শে অক্টোবরণ্ডবাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার মান্দাবাগ অঞ্চলের ব্যাপক এলাকা মুক্ত করেছে। মুক্তিবাহিনী কসবা খণ্ডে আড়াইবাড়ী দখল করেছে বলে সীমান্তের ওপারে মুক্তিবাহিনীর সদরে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে।

 মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সড়কটি অতিক্রম করেছে এবং মুক্ত করেছে। এই সার্থক অভিযান কুমিল্লার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

 মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাক বাহিনীর বহু নিয়মিত সৈন্য হতাহত হয়েছে। হানাদাররা সড়ক ত্যাগের পূর্বে ১২টি মৃতদেহ ফেলে গেছে।

মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাক সৈন্যের প্রচণ্ড সংঘর্ষ

 বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমায় গত এক মাসে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেন ও একজন লেফটেন্যাণ্টসহ ছশোর বেশী পাক-সৈন্য প্রচণ্ড সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছে।

 এই মহকুমায় একটি বিরাট অঞ্চল এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মুক্তিবাহিনী গত এক মাস ধরে পাকফৌজকে বার বার তাড়াতে পেরেছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া কর্তৃপক্ষ মহলের খবর থেকে জানা গেছে।

 মুক্তিবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী এই মহকুমার পশুরাম, চিতোলিয়া ও সালালারে একজন জুনিয়র কমিশনড অফিসারসহ অন্ততঃ ৮৪ জন পাক সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়েছে। 

-যুগান্তর, ২৫ শে অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

নাগরপুর থানা আক্রমণঃ রাজাকারসহ ২৭ জন পাক সেনা নিহত

 গত ১৬ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভোর ৪টায় নাগরপুর থানা আক্রমণ করেন। এই আক্রমনের ফলে রাজাকাররা শুধু ভীতসন্ত্রস্তই হয়নি, দলে দলে আত্মসমর্পণ করা শুরু করেছে। অপরপক্ষে জনমত এত শক্তিশালী হয়েছে যে, রাজাকাররা এখন আর গ্রামে প্রবেশ করে ধন-সম্পদ লুট করে নেবার সাহস পায় না। এই সাফল্যজনক আক্রমণে রাজাকার সহ কমপক্ষে ২৭ জন পাক সেনা নিহত হয়। আহতদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। যুদ্ধ চলাকালী নগারপুর থানা এলাকার উত্তর দিকের বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে রাজাকারদের পালিয়ে যেতে দেখা যায়। পলায়নপর রাজাকাররা মুক্তি বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে।

হানাদারদের শাশানঃ ৪২ জন নিহত

 বিগত ২৩শে অক্টোবর কালিহাতী থানার চারানে মিলিশিয়াসহ রাজাকার এবং মুক্তিবাহিনীর মধ্যে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রতি সপ্তাহে রাজাকারদের এক ঘাঁটি থেকে অন্য ঘাঁটিতে বদলি করা হয়। বল্লা শত্রু ঘাঁটি থেকে রাজাকারদের এমনি বদলির সময় এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তি বাহিনী এই আকস্মাৎ আক্রমণে মিলিশিয়া এবং রাজাকারার দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর এই সাফল্যজনক আক্রমণাত্মক যুদ্ধে ৩৯ জন রাজাকার এবং তিনজন মিলিশিয়া নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি।