পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



726

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

পাথরঘাটায় মর্টার আক্রমণ

 অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিণীর মর্টার দল মির্জাপুর থানার পাথরকাটায় ৩" মর্টার থেকে দশ রাউণ্ড গুলি বর্ষণ করে। ঘাঁটির শক্রসেনা পালিয়ে জীবন বাঁচায়। মুক্তিবাহিনী পাথরকাটা থেকে ৬টি রাইফেল এবং ৮০০রাউণ্ড গুলী উদ্ধার করে।

এলাসিন ঘাটে ৬ জন হানাদার সেনা নিহত

 সম্প্রতি নাগরপুর থানার এলাসিনে ১১ জন পাঞ্জাবী সেনার সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক সম্মুখযুদ্ধ হয়। জামাতে ইসলামের একজন কাঠমোল্লা পাঞ্জাবীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। মুক্তিবাহিনী প্রথমে এই কাঠমোল্লাকে নিশান করে গুলীবর্ষণ করেন। এই যুদ্ধে কাঠমোল্লাসহ ৬জন পাঞ্জাবী হানাদার দসু্য নিহত হয়। এবং পিছনে হঠতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী তাদের অনেক দূরে পিছু ধাওয়া করে।

সিঙ্গুরিয়ায় রাজাকার নিহতঃ ৪ জন গুরুতর আহত

 সম্প্রতি কদুসনগর (ভূয়াপুর) থানার সিঙ্গুরিয়ায় মুক্তি বাহিনীর শক্তিশালী গেরিলা স্কোয়াড একদল রাজাকারকে আক্রমণ করে। আকস্মিক আক্রমণের ফলে রাজাকারদের মধ্যে ১১ জন নিহত হয় এবং ৪ জন গুরুতরভাবে আহত হয়।

রতনগঞ্জ ঘোনাবাড়ীতে বেয়নেটহীন যুদ্ধ

 গত ২২শে আক্টোবর কালিহাতী থানার রতনগঞ্জ ঘোনাবাড়ীতে মুক্তিবাহিনী এবং বর্বর পাক দস্যু সেনাদের মধ্যে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২১শে অক্টোবর সারারাত্রি পাহারারত থাকার পর ভোর রাতে মুক্তিবাহিনী ঘোনাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ীতে ঘুমিয়ে পড়েন। প্রকাশ, ঘোনাবাড়ীর একজন চোর রাজাকারে ভর্তি হয়েছিল। তারই এক নিকট আত্মীয় এই সংবাদ বল্লার শত্রুঘাঁটিতে পৌছে দেয়। রাজাকারসহ দেড়শো মিলিশিয়া ঘোনাবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর ৩০ জন জোয়ানকে ঘেরাও করে। সকাল নটা থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয় এবং বিকেল চারটে পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই আশ্চর্যজনক যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি যুদ্ধে পরিণত হয়। উভয় পক্ষের গুলী ফুড়িয়ে গেলেই এই হাতাহাতি যুদ্ধের শুরুহয়। সম্মুখযুদ্ধ এবং পরে হাতাহাতি যুদ্ধে রাজাকারসহ কমপক্ষে ৪০ জন মিলিশিয়া নিহত হয়। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে মুক্তিবাহিনীর ২জন অসম সাহসী জোয়ান শাহাদাত বরণ করেন। হাতাহাতি যুদ্ধে আমাদের মুক্তিবাহিনীর সি, আই নামক একজন অসমসাহসী যোদ্ধা দুইজন মিলিশিয়াকে রাইফেলের বট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। উল্লেখযোগ্য যে, উভয়পক্ষের কারও রাইফেলেই কোন বেয়নেট ছিল না।

হানাদার সেনাদের রসদবাহী তিনটি নৌকা করতলগত

 গত ১৯ মে আক্টোবর ভোর ৫টায় জল্লাদ সেনাদের রসদবাহী তিনটি নৌকা মুক্তিবাহিনীর কজাগত হয়। এই নৌকা তিনটিতে তিন হাজার তিনশত এক মণ গম ছিল। ঢাকা থেকে ধলেশ্বরী নদী দিয়ে টাঙ্গাইলের চারাবাড়ী এই গম অপসারণের কথা ছিল।

সিরাজগঞ্জ পাক ছাউনিতে আক্রমণঃ ৪ জন নিহত

 গত ২৪শে আক্টোবর মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা স্কোয়াড সিরাজগঞ্জের পাক হানাদার দসু্য সেনাদের ছাউনিতে আকস্মাৎ আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন হানাদারকে নিহত এবং ৬ জনকে আহত করে। পরে স্কোয়াডটি নিরাপদে ঘাঁটিতে প্রত্যাবর্তন করে। 

-রণাঙ্গন, ২৪ আক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *