পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



727

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

বিজয় বার্তাঃ কুষ্টিয়া-যশোহর ও খুলনা রণাঙ্গনঃ

২৪শে আক্টোবর, দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধারা খুলনার “চাউলাহাসানের” বিউটি অফ খুলনা” লঞ্চখানা কোন এক গ্রাম থেকে হাইজ্যাক করে মুক্তাঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া খুলনার দু’জন কুখ্যাত মুসলিম লীগ দালালকে বন্দী করে নিয়েএসেছেন। উক্ত দালাল দু’জন বন্দী হওয়ায় স্থানীয় গ্রামের জনগণ এতদিনের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেল। এজন্য জনগণ মুক্তিবাহিনীর অভিনন্দন জানিয়েছেন।

 ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, উক্ত দালাল দু’জন লঞ্চযোগে খুলনা যাচ্ছিল রাজাকার এবং পাক সেনা নিয়ে আসেত, এই সংবাদ পেয়ে একদল মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে এই সাফল্য অর্জন করে।

 ৯ই আক্টোবর খুলনা জেলার অন্তর্গত বাগেরহাট মহকুমায় পাক আক্রমণকারীরা মুক্তিবাহিনীর দ্বারা আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয় এবং এই বীরত্বপূর্ণ আক্রমণে একজন অফিসারসহ ১০ জন পাক আক্রমণকারী শত্রুসৈন্য নিহত ও অনেকে গুরুতররূপে আহত হয়। মুক্তি বাহিনী এখান থেকে অনেক অস্ত্রশস্ত্র দখল করেন।

বঙ্গবন্ধু নৌবহরে আলোচনা সভা

 ২৩শে আক্টোবর, বাংলাদেশের ৯নং সেক্টরের কোন এক স্থানে বঙ্গবন্ধু নৌবহর নং -১ এ একটি নৌযানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এই আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ, সরকারের উচ্চতম পদের কর্মচারীগণ এবং মুক্তিবাহিনীর অধিনায়কগন অংশগ্রহন করেন, অতিথীগণ বঙ্গবন্ধু নৌবহর নং ১ পরিদর্শন করেন।

 প্রকাশ থাকে যে এই সকল নৌযান ৯নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঞ্চল হতে পাক হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এসেছে। এখানে উল্লেখ প্রয়োজন যে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধারা একখানা বৃহৎ নৌযান হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনে বঙ্গবন্ধু নৌবহরের সাথে যোগ করেছে।

রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্নঃ ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্ট রণাঙ্গন

 ময়মনসিংহ জেলার হাতিবাগান অঞ্চলে পাক সৈন্যের উপর মুক্তিবাহিনীর এক প্রবল আক্রমণে ২০ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী এই অঞ্চলে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মধ্যকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন করে দেন। মুক্তিবাহিনীর কৌশলী গেরিলারা ১৩ই অক্টোবর গৌরীপুর থানা আক্রমণ করে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র দখল করেন। বিলম্বে প্রাপ্ত অপর এক খবরে জানা যায় টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। গোপালপুর থানায় মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে ২৫ জন হানাদার পাকসেনা নিহত হয়। ঢাকায় কালিয়াকৈর অঞ্চলের রাজাকারদের ঘাঁটি মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ময়মনসিংহের সরিষাবাড়ী হতে ৬০ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমৰ্পন করতে বাধ্য হয়। ঢাকা ও টাঙ্গাইল সড়ক পথের মধ্যকার অনেকগুলো সেতু মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ধ্বংস করে দেন এবং এর ফলে উপরিউক্ত সড়কের যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।

 বিস্তারিত খবরে প্রকাশ বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে সমবেত মুক্তিবাহিনী শহরের সন্নিকটে কোন এক ময়দানে সমবেত হন এবং সন্ধ্যাবেলায় প্রায় এক সহস্র মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সেনানী পাক বিরোধী বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে শহরের কয়েকটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। হানাদার বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এ সময়ে ছাউনিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। শহরের কোন এক সড়কে পাহারারত ৭ জন হানাদার শত্রুসৈন্য মুক্তিবাহিনীর হাতে খতম হয়।

 বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ নামক পাক সেনাদের দুখানা লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়। এ সংঘর্ষে ১৯ জন পাক সেনা খতম হয়। এখানে