পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



733

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

মুক্তিবাহিনী আবার জাহাজ ডুবিয়েছেনঃ পাক সৈন্যরা মরছে

  ঢাকা, ২৮শে অক্টোবরঃ পাকিস্তান সরকার উপকুলবাহী একটি নতুন জাহাজ সংগ্রহ করেছিল। গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী এ জাহাজটিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। জাহাজটির নাম এস, এস, সপ্তডিঙ্গা। অত্যাবশ্যক সামগ্রী বোঝাই করা এই জাহাজটি বরিশাল-খুলনা রুটে ছিল। 

সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, ১ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

মাদারীপুর বরিশাল খুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হানাদার বাহিনী নাস্তানাবুদ

\ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি \

 বাংলার অগ্নিসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জেলা অঞ্চল ফরিদপুর, বরিশাল এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁহাদের গেরিলা তৎপরতা জোরদার করিয়াছেন। ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জের নিকট মধুমতী নদীতে এবং ভাটিয়াপাড়া এলাকায় দস্যবাহিনীর প্রহরাধীনে পাট বোঝাই কয়েকটি বার্জ এবং হানাদার সৈন্যবাহী কয়েকটি লঞ্চ ডুবাইয় দিয়া জঙ্গিশাহীর হৃৎকম্পনের কারন ঘটাইয়াছেন। ইদানীং জঙ্গীসেনারা এই পথে লঞ্চ কিংবা মাঝারী আকৃতির ষ্টিমার দিয়াও চলাচল করিতে সাহস পাইতেছে না। এই অঞ্চলের নদী পথে খানসেনাদের লঞ্চ ডুবাইয়া দেওয়া, আক্রমণ করা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাগণ কর্তৃক দখল করিয়া লওয়ার তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত ভাটিয়াপাড়ার নিকট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হাতে প্রচণ্ড মার খাইয়া হানাদার বাহিনী বোমারু বিমানের সাহায্যে ভাটিয়াপাড়া এলাকায় নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা এবং কয়েকটি গ্রাম পোড়াইয়া দিয়াও এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি ইহাদের সম্পূর্ণ আয়ত্বে আনিতে পারে নাই।

 গত ১৭ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা জেলার বয়রা এলাকায় লালসিয়া নামক একটি বড় জাহাজ এবং একখানি বার্জ ডুবাইয়া দিয়া জঙ্গি শাসকদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করিয়াছেন। এই জাহাজটি খুলনা নিউজপ্রিণ্ট কারখানার জন্য সুন্দরবন এলাকা হইতে সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হইত। ইদানিং ইহাকে খান সেনাদের চলাচলের জন্যও ব্যবহার করা উচিত বলিয়া জানা যায়।

 স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নীে ইউনিটের দুঃসাহসী কমাণ্ডোরা চলতি মাসের গোড়ার দিকে মাদারীপুর দেন। উল্লেখযোগ্য যে, এই সময়ে বরিশাল জেলার গৌরনদী এলাকায়ও খানসেনাদের একটি লঞ্চ পুড়াইয়া দেন এবং বরিশাল সদর উত্তর মহকুমার তথাকিত প্রশাসক, পুলিশ কর্তা এবং পাঞ্জাবী পুলিশকে হত্যা করেন।

 এইসব জলাঞ্চলের স্থল এলাকার থানা দফতরগুলিতে হানাদার বাহিনীর যে সব ঘাঁটি স্থাপিত হইয়াছে, স্বাধীনতা গেরিলা তৎপরতা এখন এইসব ঘাঁটির উপর বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে। মৃত্যু ভয়াল পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ধলেশ্বরী আর মধুমতীর উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে লালিত পালিত দুর্জয় মুক্তি সেনারা আধুনিক ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত হানাদার সৈন্যদের পানিতে ডুবাইয়া মারিয়া ময়লা আবর্জনার মত ভাসাইয়া দিতেছেন।

 চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মাদারীপুর মহকুমার ভেদরগঞ্জে হানাদার সৈন্যদের ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া অসমসাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ভেদরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল সংখ্যক খানসেনাদের সহিত এক দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত হইয়া পৌনে দুইশত খানসেনা খতম করেন। অবস্থা বেগতিক দেখিয়া জীবিতদের মধ্যে ৯ জন খানসেনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিকট অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে