পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



736

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। ২৮শে অক্টোবর মুক্তিসেনারা ধলাই চা বাগানে অবস্থানরত সৈন্যর উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ২১ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং তদুপরি আরো বহু অনিয়মিত সৈন্য নিহত হয়। এই যুদ্ধে আমাদের ৩ জন বীর যোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। তাছাড়া মুক্তিসেনারা বারলেখা এবং কাটলিমারার মধ্যবর্তী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আচল করে দিয়ে পাক সেনাদের দারুন অসুবিধার সৃষ্টি করেন।

 অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ আমুরা এলাকায় মুক্তিবাযোদ্ধারা রাজাকার ও নিয়মিত সৈন্যের সমস্বয়ে গঠিত পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ২ জন হানাদার শত্রকে নিহত করেন। ত্রিমোহিনীতে পাক সৈন্যদের সঙ্গে আরেকটি মারাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মুক্তি যোদ্ধারা ১২ জন পাক সৈন্যকে খতম করেন। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের একজন তরুণ যোদ্ধা শহীদ হন।

 রংপুর-রাজশাহী রণাঙ্গনঃ ২৭শে অক্টোবর জগৎপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সৈনদের একটি মিশ্র টহলদার দলের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে ৯ জন শক্রসেনা খতম ও ৪ জনকে আহত করেন। এর আগে ২৪শে অক্টোবর একই এলাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে ৫ জন অনিয়মিত শত্রুসেনা খতম হয়।

 কুষ্টিয়া-যশোহর-খুলনা রণাঙ্গনঃ মুক্তিবাহিনী বীর যোদ্ধাগণ গোয়ালহাটের সন্নিকটে দু’জন এবং কোস্তনিয়ার নিকটে পাঁচজন পাক সেনাকে হত্যা করে। এছাড়া যশোহর জেলার গদখালী ও নাভারন এর মাঝামাঝি এক জায়গায় রেল লাইন উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চুনামকাঠির কোন এক জায়গায় ১৪টি রাইফেলসহ ১৮ জন রাজাকারকে আটক করতে সমর্থ হয়। খুলনা জেলার খাজুরা, হামিদপুর, লেবুতলা, ওসমানপুর প্রভৃতি এলাকায় হানাদার পাক বাহিনী আক্রমণ চালালে বীর আক্রমন চালিয়ে মুক্তি বাহিনী ৪ জন খান সেনাকে হত্যা করে।

বালাদেশ নৌ-বাহিনীর সাফল্য

 বাংলাদেশ নেভাল ফোর্স ৯ নং সেক্টরে বেশ সাফল্যের সাথে মঙ্গলা ও চালনায় পাক সেনাদের কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়। নৌবাহিনীর ডুবুরিরা এ সকল আক্রমণ চালায়। এচাড়া নৌ-বাহিনী কয়েকটি নদী বন্দরে পাক সেনাদের বেশ কয়েকখানা লঞ্চ ও ষ্টিমার ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

 আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি সম্প্রতি একটি নৌ-যান পরিদর্শনে গেলে নেভাল লেফটেন্যাণ্ট মোহাম্মদ খুরশীদ (তথাকথিত আগরতলা মামলার আসামী)-এর সাথে এক সাক্ষাৎকার ঘটে। তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান যে এই নৌ-বাহিনী পাক সেনাদের যে কোন শক্তির সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন যে এই সেক্টরের নেভাল বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করার পিছনে সকল অফিসার ও কমাণ্ডারদের দান অপরিসীম।

 “মাহতাব জাবেদ” নিমজ্জিতঃ ৪ঠা নভেম্বর, খবর পাওয়া গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে মাহতাব জাবেদ’ নামের একটি বিরাট তৈলবাহী জাহাজের উপর মুক্তিবাহিনীর একটি দল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জাহাজটিকে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে ফায়ারম্যানসহ ৭ জন নাবিক হয় ডুবে মারা গেছে, নয়ত প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। কেননা এদের কোন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ছাড়া ১০ জন খালাসী গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জ হানাদার মুক্ত

 ৩রা নভেম্বর, অসমসাহসী মুক্তিসেনারা ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ শহরটিকে হানাদারমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া এই মহকমার পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর, কটিয়াদী, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, ইটনা ও নিকলি থানাগুলি পূর্বেই মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে।