পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



737

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 গেরিলাবাহিনী কিশোরগঞ্জ-গৌরীপুরের মধ্যে একধিক সেতু ও কালভার্ট ধ্বংস করে দিয়ে ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ ভৈরববাজারের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

 বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরটি মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। কিশোরগঞ্জে কয়েক দিনের সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ২০ জন হানাদার সেনা নিহত এবং বহু সংখ্যক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

-বিপ্লবী বাংলাদেশ, ৭ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

ঢাকা আজ এক বিচ্ছিন্ন নগরী

 ঢাকা হইতে ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা জানাইয়াছেন, গত ৩রা নভেম্বর তিনজন মুক্তিযোদ্ধা পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের পোষাক পরিধান করিয়া ঢাকার প্রধান পাওয়ার ষ্টেশনের ভিতরে ঢুকিয়া পড়েন কয়েক দিন পূর্বে তিনজন ইঞ্জিনিয়ারের নিহত হওয়া সম্পর্কে তদন্ত করিতে আসিয়াছেন বলিয়া তাহারা প্রহরীদের জানান। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা উক্ত পাওয়ার ষ্টেশনের চারটি জেনারেটর এর মধ্যে তিনটি উড়াইয়া দেন এবং প্রহরীদের চোখে ধূলা দিয়া সেখান হইতে সরিয়া পড়েন।

 মুক্তিযোদ্ধাদের জোর তৎপরতার ফলে ঢাকার আশেপাশে ত্রিশ মাইল এলাকাব্যাপী সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। ঢাকা পাওয়ার ষ্টেশনের ইঞ্জিনীয়াররা জানান আগামী কয়েকদিন ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্ট, ইণ্টরকণ্টিনেণ্টাল হোটেল, এবং বৈদেশিক কূটনীতিকদের আবাসস্থল ছাড়া অন্য কোথাও আলো জুলিবে না।

 অন্যান্য সূত্র হইতে পাওয়া খবরে জানা যায়, ঢাকা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হইতে প্রায় বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে। ঢাকা হইতে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কসমূহ ত্রিশ মাইলের ভিতর নষ্ট করিয়া দিয়াছেন এবং প্রধান সড়কগুলির উপর মাইন সংস্থাপন করিয়া রাখিয়াছেন।

 আমেরিকান সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানাইয়াছেন,মুক্তিযোদ্ধারা দুইটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক অবরোধ করিয়া বেশ কিছু অর্থ উদ্ধার করেন।

 গত অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে পিলখানা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পুতিয়া রাখামাইনের আঘাতে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য বোঝাই এবটি লরি বিধ্বস্ত হয়। ৯ই অক্টোবর ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্টের বাহিরে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার আক্রমণে বেশ কিছুসংখ্যক হানাদার সৈন্য খতম হয়। তাহারা নরসিংদীর কাছে তিতাস গ্যাস পাইপলাইনও উড়াইয়া দেন।

 ৪ঠা নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নৌবহিনীর জনৈক প্রাক্তন অফিসারের চারিজন পুত্রকে খতম করেন। তাহারা লুট এবং বাঙ্গালী হত্যায় হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করিতেছিলেন। ঐদিন রাত্রে বীর গেরিলারা সবুর খাঁর বাড়ীতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান।

 তেজগাঁ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা নৌকায় করিয়া টহলদানরত একদল পাঞ্জাবী সেনার বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেন। উক্ত সংঘর্ষে ৫ জন জানোয়ার নিহত হয়।