পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



741

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

টাঙ্গাইল

 আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলা থেকে পাক সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে। পাবনা জেলার রায়গঞ্জ থানা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মুক্তাঞ্চল সম্প্রসারিত হয়েছে এবং দক্ষিণে সম্প্রসারিত হয়েছে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ থানা পর্যন্ত। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের মধ্যে রেল সংযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

ফরিদপুর

 ফরিদপুর জেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকায় মুক্তিবাহিনী এক আক্রমণ চালিয়ে ১৭ জন পাঞ্জাবী পুলিশ হত্যা করে। ভেদরগঞ্জ থানায় এক আক্রমণ চালিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাঞ্জাবী পুলিশ ও পাক দালালসহ ৮৫ ব্যক্তিকে হত্যা করে। ডুমুরিয়া থানায় এক আক্রমণ চালিয়ে একজন মেজর ও একজন ক্যাপটেনসহ ৭২ জন পাঞ্জাবী পুলিশ খতম করে। মোকসেদপুর থানায় অপর এক আক্রমণে একজন ক্যাপ্টেন সহ ৭২ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং এছাড়া ১৭ জন রাজাকার খতম হয়। গোপালগঞ্জ মহকুমা ফাকুরা নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী এক আক্রমণ চালিয়ে ৮৩ জন পাঞ্জাবী সেনা খতম করে এবং এ ছাড়া বহু পাঞ্জাবী সেনা জখম হয়। এই সংঘর্ষে ১৫ জন রাজাকারও নিহত হয়।

 বরিশাল: নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হিজলা থানা আক্রমণ করে, ফলে ৭ পাঞ্জাবী পুলিশ ও ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা হিজলা থানা থেকে ৩০টি রাইফেল উদ্ধার করে। ঐ একই দিনে মুলাদী থানা আক্রমণ করা হলে থানার কর্মচারীরা মুক্তিবাহিনীর কাছে ৪০ টি রাইফেল এবং ২১ শত রাউণ্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। মুলাদী থানার ৩ জন রাজাকারকে গ্রামবাসীগণ পিটিয়ে হত্যা করে। আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে বরিশাল জেলার প্রতিটি মুক্ত এলাকায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উডডীন আছে।

 অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ক্যাপ্টেন জিয়ার নেতৃত্বে তুষখালী থানায় আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও রাজাকারকে বন্দী করা হয়। থানা থেকে বেশ কিছুসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এখানকার সরকারী গুদাম থেকে খাদ্যশস্য উদ্ধার করে জনসাধারণের মধ্যে বিতরন করে দেয়।

 রংপুর: রংপুর রণাঙ্গনের ডিমলা, নিলফামারী এবং ডোমার এলাকায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বসুরা এবং ফুলছড়ি ঘাটের মধ্যে মুক্তিবাহিনী একটি সামরিক ট্রেন উল্টে দিতে সমর্থ হয়, ফলে ৫০ জন পাক সেনা নিহত হয়। ডিমলায় এক গেরিলা আক্রমণে ১০ জন পাকসেনা এবং কিছু রাজাকার নিহত হয়েছে।

 যশোর; নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী যশোরের সাচানাঙ্গা এলাকায় অতর্কিত আক্রমণ চালান। এই আক্রমণকে পাকিস্তানী সৈন্যদল মর্টার আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। পরে হানাদার বাহিনী পলায়ন করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ৩ জন পশ্চিমা সৈন্য নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী এখানে গোলবারুদসহ ৩ টি চীনা রাইফেল হস্তগত করে। মুক্তিবাহিনী বাগডাঙ্গা এলাকায় টেলিফোন তার ও খুঁটি বিনষ্ট করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

 খুলনা: শ্যামনগর থানার কৈখালী নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের এক সংঘর্ষ ঘটলে ২ জন পাকসেনাসহ ৬ জন রাজাকার নিহত হয় এবং বেশ কিছুসংখ্যক পাকসেনা জখম হয়। মোল্লারহাট থানার চারকুলিয়া গ্রামের সন্নিকটে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালালে ক্যাপ্টেন সেলিমসহ ১২ জন হানাদার নিহত হয়।

 কুমিল্লা: সিমপুরের কাছে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ২ জন শত্রসেনাকে খতম করে এবং আরও ১৪ জনকে জখম করতে সমর্থ হয়। কোতওয়ালী কোটেশ্বর এলাকায় শক্র ছাউনির উপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে ২ জন পাকসেনাকে খতম করা হয় এবং আরও তিনজনকে আহত করা হয়।