পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



750

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

যশোর দুর্গের পতন আসন্ন : বসন্তপুর ও পচাগড় অধিকৃত :ঝিনাইদহে দর্শনায় লড়াই

 টুঙ্গি (নদীয়া) সীমান্ত, ২৬শে নভেম্বর কুষ্টিয়ার দর্শনা রেল ষ্টেশন এলাকায় প্রচণ্ড লড়াই এখনও চলছে। দিনাজপুর জেলার পচাড়র এবং খুলনা জেলার বসন্তপুরের পতন ঘটেছে মুক্তিবাহিনীর কাছে। ঝিনাইদহ পাঁচ মাথার মোড়ে (ফাইভ পয়েণ্ট ক্রসিং) মুক্তিবাহিনী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করায় যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টের সঙ্গে পাক ফৌজের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন বিচ্ছিন্ন যশোর দূর্গের পতনও এখন আসন্ন। ঢাকায় মুক্তিফৌজের আক্রমণ প্রচণ্ড রূপ নিয়েছে, গ্রেনেড আর গুলির শব্দে পাক সেনাদের প্রধান শিবির ঢাকা এখন কম্পমান। বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন রণাঙ্গনে এইসব দুর্বার অগ্রগতির সংবাদ আজ পাওয়া গেছে।

 এদিকে যশোর শহর থেকে ১২ মাইল উত্তরে ঝিনাইদহ পাঁচমাথার মোড়ে (ফাইভ পয়েণ্ট ক্রসিং) মুক্তিবাহিনী আধিপত্য প্রতিপত্য প্রতিষ্ঠা করায় দর্শনার পাকিস্তানী ফৌজের সঙ্গে যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টে ফৌজদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

 ঝিনাইদহ পাঁচ মাথার মোড় সামরিক দিক দিয়ে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মোড় থেকে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর-খুলনা, মাগুড়া ও ঢাকা যাবার রাস্তা। সুতরাং পাকিস্তানী ফৌজ ঝিানইদহ পাঁচ মাথার মোড় পুনরুদ্ধারের জন্য একটা মরণপণ লড়াই করবে বলে মনে হচ্ছে।

 এখন মুক্তিবাহিনী ঝিনাইদহ পাঁচ মাথার মোড়ে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার রাস্তায় বিরাট ব্যারিকেড গড়ে তোলায় ঝিনাইদহ থেকে পাক সৈন্যরা যশোরের দিকে যেতে পারছে না। ঝিনাইদহে পাকিস্তান যদি অতিরিক্ত ফৌজ প্যারাসূটে নামাতে না পারে, তাহলে ঝিনাইদহ থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ছাড়া আর কোন পথ নেই।

 জানা গেছে যে, ঝিকরগাছা থেকে এখনও সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণ করেনি। ঝিকরগাছা শহরটি কপোতাক্ষ নদের দ্বারা দু ভাগে বিভক্ত। শহরের যে অংশ কপোতাক্ষ নদের উপর অবস্থিত ব্রিজের পূর্ব দিকে সেখানে এখনও যুদ্ধ চলছে এবং কপোতাক্ষ নদে উপরকার ব্রিজটি এখন পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়নি।



-যুগান্তর, ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

কুষ্টিয়ায় পাক সৈন্যরা পোড়ামাটি নীতি পিছু নিয়ে পিছু হটছে

 শুক্রবার বানপুর সীমান্ত ঘুরে এসে ষ্টাফ রিপোর্টার জানাচ্ছেন, পাক দখলদার বাহিনী বাংলাদেশে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে। এক একটি ঘাঁটি ছেড়ে পালানোর আগে তারা গ্রামকে গ্রাম জুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলার বাইশটির মধ্যে বিশটি সীমান্ত ঘাঁটি থেকেই মুক্তিফৌজের তাড়া খেয়ে পাক সৈন্যরা পালিয়েছে।

 দামুরহুদা থানাও মুক্তিফৌজ বৃহস্পতিবার দখল করে নেন। থানায় এখন বাংলাদেশ পতাকা উড়ছে। থানার ও,সি, তার স্ত্রী কন্যা, সেকেণ্ড অফিসার, দুজন এস আই এবং ৭ জন পুলিশ মোট ১৩ জনকে মুক্তিবাহিনী বন্দী করে মুক্তাঞ্চলে নিয়ে আসেন।

 চুয়াডাঙ্গা ছাড়া এই মহকুমার দুটি থানাই (দামুরহুদা ও জীবননগর) এখন মুক্তিফৌজের দখলে। চুয়াডঙ্গার ভিতরও গেরিলা তৎপরতা বাড়ছে। মোজাম্মেল পেট্রল পাম্প তাঁরা জুলিয়ে দিয়েছেন, বিজলি লাইন ধ্বংস করেছেন।

 কুষ্টিয়া জেলার চরিদিক থেকে পাক বাহিনী এখন মাগুরার দিকে যেতে চাইছে। লক্ষ্য রাজবাড়ী গোয়ালনন্দ ঘাট হয়ে চাঁদপুরের দিকে পালানো। গোয়ালন্দে তারা সেজন্য ষোলটি ষ্টীমার তৈরি রেখেছে।