পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড
754
উত্তর রণাঙ্গন

 বাংলাদেশের উত্তর রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী পনের শত বর্গমাইলব্যাপী এলাকার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। তিনটি মহকুমা এই এলাকায় অন্তর্ভুক্ত।

 সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার মহকুমার ব্যানিয়াচুল, আজমীরগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 শ্রীহট্টের তাহেরপুর থানা অবরুদ্ধ। সুছনা ঘাঁটি মুক্তিাবাহিনী ঘিরে রেখেছে। কোম্পানীগঞ্জ সালুতিকর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক সেনারা শ্রীহট্ট শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীহট্ট ও সুনামগঞ্জের মধ্যে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

 ময়মনসিংহ জেলার কামালপুর ঘাঁটির চারপাশে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। টাঙ্গাইল এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি অব্যাহত আছে।

 বাহাদুরাবাদঘাট এলাকায় অস্ত্রশস্ত্রবাহী তিনশত ফুট দীর্ঘ একটি পাকিস্তানী বজরা মুক্তিবাহিনী কয়েকদিন পূর্বে ডুবিয়ে দিয়েছেন।

 ঢাকা থেকে বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, কোদালিয়াতে মুক্তিবাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করে দিয়েছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া ও গোয়ালদের মধ্যে দুটি কালভার্ট উড়িয়ে দিয়েছেন।

-যুগান্তর, ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *
মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকসেনা নাজেহাল
(বিশেষ প্রতিনিধি)

 মুক্তিযোদ্ধার হাতে পাক সেনারা পদে পদে মার খাচ্ছে বলে বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে খবরে পাওয়া যাচ্ছে। কদিন আগে কাটুলিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনী ও পাকসেনার মধ্যে এক তুমুল লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধার মেশিনগান ও রাইফেলের গুলিবর্ষণের মুখে পাক সেনারা নাজেহাল হয়ে পিছু হটে যায়। এ সংঘর্ষে পাঁচজন পাকসেনা খতম হয়েছে বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়ার নিকটে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণে একটি বোঝাই পাক সৈন্যবাহী ট্রেন সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। বহু শত্রসেনা হতাহত হয়েছে।

 সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষে পঞ্চশের বেশি খানসেনা নিহত হয়েছে বলে প্রকাশ। পাকসেনাদের পক্ষে এই পাপযুদ্ধে লিপ্ত ৬৫ জন রাজাকারও খতম হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার মুক্ত করে আরো সামনে এগিয়ে চলছে।

 চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল চাপ সৃষ্টি করার দরুন পাকবাহিনীর নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। পাকসেনা হতাহতের খবর প্রতিদিনই আসছে।

 বীর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা জিলার কসবা রণাঙ্গনে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছেন। এক বিশাল এলাকা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কবলে রয়েছে। খবরে আরো প্রকাশঃ সালদানদী অঞ্চলের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের ইস্পাতকঠিন আক্রমণ প্রতিহত করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও পাকবাহিনী প্রচণ্ড মার খেয়েছে। এই যুদ্ধে ৬০ জনেরও বেশি পাক সেনা প্রাণ হারিয়েছে।