পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



756

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 তাদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবশেষে গত ২৯শে নভেম্বর মুক্তিফৌজের প্রবল চাপের মুখে পাক সেনারা আর টিকতে না পের বিপুল ক্ষতি স্বীকার করে নাগেশ্বরী থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।

 সংবাদে আরও প্রকাশ যে, বিভ্রান্ত পাক সেনাদের অনেকে মুক্তিবাহিনীর প্রবল চাপের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং তাদের ইউনিফর্ম ত্যাগ করে সাদা পোশাকে কুড়িগ্রামের দিকে ছুটে পালায়। এই অভিযানে আমাদের মুক্তিবাহিনী বহুসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে।

-অগ্রদূত, ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

米           米           米           米           米

রণাঙ্গন থেকে লিখছি

 স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ কালিগঞ্জ থানায়, কালিগঞ্জ ও ঘোড়াশালে হানাদার বাহিনীকে চারিদিক দিয়ে ঘেরাও পূর্বক মারণাঘাত হানিয়া প্রতি মুহুর্তেই রক্তে রঞ্জিত পশুর মৃতদেহগুলি দেখিবার গর্বিত আশায় উদগ্রীব হইয়া আছেন। এ পর্যন্ত ১৭ জন পঞ্জাবী দস্যু নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়। শ্রীপুর ও নরসিংদীতেও হানাদার বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাগণ ঘেরাও করিয়া প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করিয়াছে।

-মুক্তবাংলা, ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

米           米           米           米           米

এখনই চরম আঘাত হানতে হবে ওসমানী

 মুজিবনগর, ২৯শে নভেম্বর- আমার ছেলেরা এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মাত্র কয়েক মাসেই তারা পৃথিবীর যে কোন সুশিক্ষিত সেনাবাহিনীর সাথে পাল্লা দেবার মতো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে। আর দেরী নয়, এখনই চরম আঘাত হানতে হবে- বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী প্রধান কর্নেল ওসমানী সম্প্রতি মুজিবনগরে এই কথাগুলো বলেন।

 মুক্তিযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, শত্ররা এখন তাদের শিবিরগুলোতে বন্দী হয়ে আছে। আমাদের গেরিলারা তাদের প্রতি পদে পদে বিপদের জাল পেতে রেখেছে। মুক্ত এলাকার কাছাকাছি আসতে গেলেই তাদের রক্তাক্ত নাক নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।

 জনাব ওসমানী বলেন, মার্সিনারী সৈন্যবাহিনী আর জাতীয় মুক্তিবাহিনীতে তফাৎ অনেক। এখানে গোটা দেশ এক হয়ে লড়ছে। আমার ছেলেরা চাকুরী করার মন নিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়নি। তারা প্রতিরোধ নেবার শপথ নিয়ে সব কিছু পেছনে ফেলে বন্দুক কাঁধে নিয়েছে।

 মুক্তিবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে দৃঢ় আস্থা নিয়ে কর্নেল ওসমানী দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, আমরা এগিয়ে চলেছি। শত্ররা বড় জোর আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে। আমার ছেলেরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেবেই।

মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট জেলা তোলপাড় করে তুলেছেন

 মুজিবনগর, ২৮ শে নভেম্বর- শ্রীহট্টের রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে পাক সেনারা ছিন্নভিন্ন ও ছন্নছাড়া হয়ে ছুটে পালাচ্ছে। এই মেজর রাধানগর শহরটি মুক্তিবাহিনীর দখলে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে আর বিশেষ বাকী নেই। এই শহরটি মুক্তিবাহিনীর হাতে এলে করিমগঞ্জ সীমান্ত থেকে শালুটিকর পর্যন্ত মুক্ত এলাকায় পরিণত হবে।

 এদিকে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার মহকুমা মিঘাউন, ইটনা, নিকলি, অষ্টগ্রাম, কানিয়াচুল, আজমীরগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর এলাকা মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।