পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



761

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

সিলেটের জকিগঞ্জ সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানী সৈন্যমুক্তি করেছে। খুলনা জেলার সাতক্ষীরা ও নোয়াখালীর ফেনী মহকুমা মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 ফেনী দখলের ফলে উত্তরে লাকসাম থেকে দক্ষিণে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মহকুমা শহরকে চারিদিক থেকে অবরোধ করেছে। জননী বাংলার কমাণ্ডোরা সাতক্ষীরা মহকুমার দেবহাটা, কালিগঞ্জ প্রভৃতি থানা ও টাঙ্গাইল জেলা এবং সিলেটের জকিগঞ্জ থানাকে সম্পূর্ণ শত্রমুক্ত করে কিশোরগঞ্জ ও সাতক্ষীরা শহরের আশেপাশে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই এই সমস্ত মহকুমা থেকে হানাদার শত্রুদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হবে বলে মুক্তিবাহিনীর সদর দফতরের খবরে জানা গেছে।

 বরিশাল,ফরিদপুর ও কুমিল্লা অবরোধঃ সংগ্রামী বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা জঙ্গীশাহীর সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় একমাত্র জেলা সদর ছাড়া সারা ফরিদপুর ও বরিশাল জেলা থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ভাড়টিয়া সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। যশোর জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র চৌগাছা মুক্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে।

 সামগ্রিকভাবে বরিশাল ও ফরিদপুরের তিন-চতুর্থাংশের বেশী এলাকা জলপথের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ষ্টিমার ও লঞ্চগুলির উপর আক্রমণ চালাবার ফলে ঐগুলির চলাচল বন্ধ হয়েছে। গেরিলারা উত্তর রণাঙ্গনের রাধানগরে একমাস যুদ্ধ করে ঐ এলাকাটি দখল করে নিয়েছে।

বিয়ানীবাজার, আখাউরা, কুলাউড়া, ব্রহ্মণবাড়িয়া, দর্শনা দখলেঃ

সিলেট, যশোর, কুমিল্লা, নোয়াখালীর পতন আসন্ন

 বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। তারা বিয়ানীবাজার, কুলাউরা, লাকসাম, আখাউড়া, দর্শনা, লালমনিরহাট, মিয়াবাজার, কোটচাঁদপুর দখল করেছে। ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনী এসব এলাকা দখল করে বর্তমানে সিলেট, যশোর, কুমিল্লার শহর দখলের জন্য যুদ্ধ করেছে। শীঘ্রই তিনতি জেলা পাক ভাড়াটিয়া সৈন্য মুক্ত হবে বলে আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধিরা জানিয়েছে।

 সিলেটে প্রচণ্ড যুদ্ধঃ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সিলেটের ১০ মাইল দূরে শাহিবাগে শত্রু বাহিনীর হানাদারদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার মহকুমার মিটাউন, ইটনা, নিকলি, অষ্টগ্রাম, বানিয়াচঙ্গ, আজমীরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর এলাকা এখন সংগ্রামী গেরিলাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 তাহেরপুর থানা অবরুদ্ধ। কোম্পানীগঞ্জ ও সালুটিকর এলকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে পাক শক্র সেনাদের যুদ্ধ চলছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের মধ্যে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শ্রীমঙ্গল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে।

বাংলাদেশে পাক বিমানবহর খতম

 মুজিবনগর, ৬ই ডিসেম্বর তিন দিনের যুদ্ধে ভারত দখলীকৃত বাংলাদেশে এহিয়া বাহিনীর প্রায় সমস্ত বিমান বহর নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। শনিবার ১৭০ বার ও রবিবার ২৭০ বার ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করে ৪৭ খানি জঙ্গী বিমানকে ধ্বংস করেছে। ঢাকা, লাহোর, পেশোয়ার, চট্টগ্রাম, সারগোদা, করাচীসহ বহু স্থানে বোমাবর্ষণ করেছে। ভারতীয় সূত্রে জানা গেছে গতকাল রবিবারে ও সোমবারে বাংলাদেশের আকাশে স্বাধীনভাবে ভারতীয় জঙ্গী বিমানাগুলি বিনা বাধায় উড়ে যায় ও কুর্মিটােলাসহ দখলীকৃত বাংলাদেশে জঙ্গীশাহীর বিভিন্ন সামরিক বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গী এহিয়ার বর্তমানে কোন বিমান আর নেই। ভারতীয় বিমান বাহিনী সবগুলি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।