পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



762

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

চট্টগ্রামে পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিধ্বস্ত

 করাচী থেকে এসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার তিন সকাল বেলার পর পর কয়েকটি বিস্ফোরণের মধ্যে মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামে পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কয়েকটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শমসেরনগর ও ঠাকুরগাঁও বিমানঘাঁটি দখলে

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত জননী বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর বিক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার ভাড়াটিয়া সৈন্যদেরকে আঘাতের পর আঘাত হেনে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে চিরতরে সমূলে বিনাশ করছে। মুক্তিবাহিনী গত শুক্রবার সিলেটের শমসেরনগর বিমান ঘাঁটি এলাকার চার দিক থেকে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুবাহিনীর সাথে প্রচণ্ড লড়াই করে শমসেরনগর বিমানঘাঁটি দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী ঐ দিনই ঠাকুরগাঁও শহর ও বিমানঘাঁটি দখল করে এবং বিজয় গৌরবে গুরুত্বপূর্ণ রেলশহর সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হয়ে শত্রবাহিনীর উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

চারটি কামান দখলে

 কুমিল্লার গঙ্গাসাগরে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী হানাদার সেনাদের পরাস্ত করে তাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে ফেলে যাওয়া ৪ টি বড় কামান দখল করেছে।

-জন্মভূমি, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

দশদিগন্তে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়জয়কার

\রণবার্তা পরিবেশক \

 বাংলাদেশের সকল রণাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিহত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রহিয়াছে। দখলীকৃত এলাকার অভ্যন্তরেও দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধারা জলে স্থলে খান সেনাদের উপর অতর্কিত হামলা চালাইয়া তাদের খতম এবং আহত কারিয়া চলিয়াছেন।

 ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের উত্তরাঞ্চলের টেংড়াটিলা, গড়া, সিমুলতানা, কানী, আলীরগাঁও, পিরিজপুর, সুলতানপুর এবং উত্তরে রংপুর জেলার নাগেশ্বরী মুক্ত করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করিয়াছেন। ময়মনসিংহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ কামালপুর এলাকারও বিস্তৃত পূর্বঞ্চল হইতে হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করা হইয়াছে।

 ফরিদপুর এবং বরিশাল পটুয়াখালী জেলার বহু এলাকা হইতে হানাদার বাহিনী সরিয়া পড়িয়াছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার) নোয়াখালী জেলার ফেনী, যশোর শহর, ঝিকরগাছা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, দর্শনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, শমসেরনগর আখাউড়া প্রভৃতি স্থানে প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়। সকল রণাঙ্গনেই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রচণ্ড মার খাইয়া হতাশাগ্রস্ত এবং মনোবলহারা হানাদার বাহিনী পিছু হটিয়া যাইতেছে। মুক্ত অঞ্চলসমূহ দ্রুত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক এবং সামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হইতেছে। সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত লোকজনের ত্রাণকার্য পুনর্বাসন কার্য শুরু হইতেছে।

 গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা এবং ত্রিশালে মুক্তি সংগ্রামীরা ২টি অফিস স্থাপন করেন। খানসেনা কর্তৃক গঠিত রাজাকার, বদর এবং সমাজবিরোধী ব্যক্তিরা এইসব অফিসে আসিয়া স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করিতেছে।