পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



764

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 কুমিল্লা-নোয়াখালী-চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া রেল জংশন কখল করিয়া লওয়ায় সিলেট-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকার সহিত ইহাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। কুমিল্লা হইতে সড়কপথে ঢাকায় ফিরিয়া যাওয়ার পথে দাউদকান্দি ফেরিঘাট তথা গোটা দাউদকান্দি এলাকা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে।

 কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রামের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলিয়া আসায় কুমিল্লার সহিত ফেনীর এবং ফেনীর সহিত চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। চট্টগ্রাম হইতে কিংবা কুমিল্লা হইতে খানসেনারা ফেনীতে আর রসদ কিংবা সৈন্য সরবরাহ করিতে পারিবে না। এদিকে সিলেটেও আকাশ, সড়ক এবং রেলপথ বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে। জলপথে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাট আজমিরীগঞ্জ, অষ্টগ্রাম চাতলপার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে রহিয়াছে। জলপথে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা হইতে ঢাকায় যাওয়ার পথও বন্ধ হইতে চলিয়াছে। লাকসাম দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা ও মিত্রবাহিনী নদীপথের গরুত্বপূর্ণ জংশন চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন। চাদপুর পতনের পর জলপথে বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনার মধ্যে খানসেনাদের চলাচলের সকল সম্ভাবনা বন্ধ হইয়া যাইবে। ময়মনসিংহ সেক্টরে জামালপুর রেলওয়ে জংশনও দুই-একদিনের মধ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হাতে পতন ঘটিলে রেলপথে উত্তর বাংলা-ময়মনসিংহ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িবে।

 উল্লেখযোগ্য যে, ঢাকা বিমান বন্দরটিও সম্পূর্ণ অচল হইয়া পড়ায় বাংলাদেশ হইতে খানসেনাদের আকাশপথে পলায়নের পথ রুদ্ধ হইয়া পড়িল। সমুদ্রপথে বাংলাদেশের সীমানা বরাবর বঙ্গোপসাগরে মুক্তিযোদ্ধাদের মিত্র ভারতীয় নৌবহর কঠোর ব্যুহ রচনা করায় চট্টগ্রাম দিয়াও খানসেনারা সমুদ্রপথে পশ্চিম পাকিস্তানে পলায়নের পথ পাইবে না।

সাবাস!

 এ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক সংবাদে প্রকাশ, মুক্তিযোদ্ধারা গত ১লা ডিসেম্বর ঢাকার দুইজন মুসলিম লীগ দলীয় কর্মীকে সাবাড় করিয়াছে।

 হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়াছে যে, আরো দুইজনকে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। তাহাদের অবস্থাও গুরুতর।

 পুলিশ জানাইয়াছে যে, নিহত শাহজাহান এবং আশেক নসরুল্লাহ যখন শান্তিবাগের এক রেষ্টুরেণ্টে বসিয়া ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাহাদের উদ্দেশ্যে ষ্টেনগান হইতে গুলিবর্ষণ করে। গেরিলাদের কাহাকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নাই।

 এএফপির এক খবরে প্রকাশ, ঢাকায় পিপলস পার্টির অফিস এক বোমা বিস্ফোরণের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অফিসটি জুলফিকার আলী ভুট্টো গত দুই মাস পূর্বে উদ্বোধন করেন।

 অফিসের আসপবাবপত্র সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। বিস্ফোরণের সময় অফিসে কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল না।

 গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের আর এক অভিযানে একজন ব্যাঙ্ক প্রহরী এবং একজন ব্যাঙ্ক কর্মচারী আহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতায় দিশাহারা

হানাদার বর্বর বাহিনীর পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন

 বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের নির্দেশে সামরিক বাহিনীর লোকেরা পুনরায় গ্রামবাসীদের হত্যা এবং বাড়ী ঘর জ্বালাইয়া দেওয়ার এক বর্বর অভিযান শুরু করিয়াছে।

 গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরা কতজন যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাইয়া হত্যা করা হইয়াছে তাহার এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট গত ১লা ডিসেম্বরের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে।