পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



766

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ কর। তোমাদের বিমান বাহিনী সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী তোমাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে, তোমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তোমাদের আকাশপথ অবরুদ্ধ। জলপথেও তোমরা যোগাযোগ করতে পারবে না। চট্টগ্রাম, খুলনা ও চালনা সকল নদীবন্দরগুলো ভারতীয় নৌবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ। বাংলাদেশে তোমরা যে বর্বরতা ও নৃশংসতা চালিয়েছ মুক্তিবাহিনী তার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত, আর সময় নেই- তোমরা যদি বাঁচতে চাও অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ কর নতুবা তোমাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। তোমরা একটি সুসুজ্জিত বাহিনীর সম্মুখীন হয়েছ। তোমরা জান অস্ত্র ছেড়ে দেয়া সৈনিকের পক্ষে গ্লানিকর কিছু নয়। ভারতীয় বাহিনী তোমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। তোমরা মরবে কেন, ভারতীয় বাহিনীর সামনে অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সাথে পুনর্মিলিত হও।



-বাংলাদেশ, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১
* * * * *

আফসারের নেতৃত্বে

নয়নপুরে ১৪ জন নিহত

 ১২ই নভেম্বর। হাবিলদার আবদুল হাকিম সাহেব ঢাকা জেলার জয়দেবপুর থানার নয়নপুরে পাকসেনাদের সাথে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হন। উক্ত সংঘর্ষে ১৪ জন হানাদার দস্যুসেনা নিহত হয়।

 অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ: ১৯শে নভেম্বর। ভালুকা ঘাঁটি হতে পলায়ন করে আবদুল হাকিম নামে একজন রাজাকার রাইফেলসহ মুক্তিবাহিনীর শিবিরে আত্মসমর্পণ করে।

 কালিয়াকৈরে সাফল্য: ২০শে নভেম্বর। ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর থানার অনতিদূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তার লতিফুর ব্রীজে দুঃসাহসী হাবিলদার আবদুল হাকিম সাহেবের নেতৃত্বে প্রায় দুঘণ্টা যুদ্ধ চলে। উক্ত ব্রীজে পশ্চিমা ছ'জন রেঞ্জার পুলিশ নিহত হয়। নিকটস্থ ধানক্ষেতে রাইফেল ফেলে দিয়ে বাকি রেঞ্জার পুলিশ ও রাজাকার পালিয়ে যায়।  পরপরই পাশের আরেকটি কালভার্টে আক্রমণ করে ছ’জন রাজাকারকে গ্রেফতার করা হয় আর তিনজন রাজাকারকে গুলি করা হয়। এখানে ৮টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়, রাইফলের সাথে ৩০০ রাউণ্ড গুলিও ছিল।

 ধান কাটার সাজা: ৩রা ডিসেম্বর। শুক্রবার বেলা ৩টার সময় যখন রাজাকারদের একটি গ্রুপ ধামশুর গ্রামে ধান কাটার জন্য আসে তখন মুসলেহ উদ্দীনের নেতৃত্বে ২নং প্লাটুন কমাণ্ডার নাজিম উদ্দীনের সেকশনটি আক্রমণ চালায়। আক্রমণের প্রথমেই দু’জন রেঞ্জার ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয় বাকি কিছুসংখ্যক রাজাকার এক বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। তখন মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ দ্বারা বাড়ীটি একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হয়।

 বাড়ীটির ধ্বংস্তুপের নীচে ৩ জন রাজাকারের মৃতদেহ পাওয়া যায়, বাকি সব রাজাকার শুধু অস্ত্র নিয়ে লাশগুলো ফেলেই পালিয়ে যায়।

 হানাদার খতম: ২রা ডিসেম্বর। কমাণ্ডার মোসলেহ উদিনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বেলা দুটোর সময় ভালুকা থেকে পশ্চিমা হানাদারসহ একদল রাজাকার কাঁঠালী গ্রামে বাড়ীঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করতে আসে। আমাদরে মুক্তিবাহিনীর সেকশন কম্যাণ্ডার গিয়াস উদ্দিন এবং ৩নং সেকশন কমাণ্ডার আবদুল ওয়োহেদের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৩ জন পাক হানাদার ও ৭ জন রাজাকার নিহত এবং ৭ জন গুরুতররুপে আহত হয়। পরে হানাদারেরা মৃত লাশগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।

 কারগো ধ্বংস: ৬ই ডিসেম্বর। কালিয়াকৈর থানার অন্তর্গত ঢাকা-টাঙ্গাইল রাস্তার উপর কালিয়াকৈর হতে ছ’টি আড়াই টনি কারগো ভর্তি পশ্চিমা রেঞ্জার পুলিশ ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। হাবলিদার হাকিম সাহেবের নেতত্বে