পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



771

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

বাংলার বিভিন্ন এলাকার সহিত কুমিল্লাও শত্রমুক্ত

 গত ৮ই ডিসেম্বর বুধবার প্রত্যুষে শহরবাসী কুমিল্লা শহরকে যেন হালকা, স্বচ্ছ ও পবিত্র বলিয়া দেখিতে পায়। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিতে পারে কুমিল্লা শহর শত্রমুক্ত এবং মুক্তি ও মিত্রবাহিনী কুমিল্লা শহরে পৌছিতেছে। এই আনন্দে জনগণ আনন্দ উল্লাসে একে অন্যের সহিত আলিঙ্গন ও ‘জয় বাংলা ধ্বনী দিতে থাকে।

 এই সঙ্গে সর্বপ্রথম কুমিল্লা কোর্ট রোডে সহকারী সমবায় রেজিস্ট্রার অফিস ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস গৃহের উপরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িতে দেখা যায়। তার পরপরই প্রতিটি গৃহে স্বাধীন বাংলার পতাকা শোভা পাইতে থাকে।

 সকাল আটটা নাগাদ শহরের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত হইতে বাংলার দুলাল মুক্তিবাহিনীরা ক্ষিপ্রতার সহিত শহরে প্রবেশ করে এবং বঙ্গশাৰ্দুল ও মিত্রবাহিনীর সহিত কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া ময়নামতির দিকে ধাবিত হইতে থাকে, কেহ কেহ আবার শহর প্রদক্ষিণ করিয়া জনগণকে স্বাধীনতার মোবারকবাদ জানাইতে থাকে।

 এখানে উল্লেযোগ্য যে, গত ৬ই ডিসেম্বর বিকাল চারটা হইতে কারফিউ এবং রাত্রে সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট ঘোষণা করা হয়। ওই দিন বিকাল ৪টায় খবর পাওয়া যায় যে, খান সেনারা সীমান্ত হইতে পশ্চাদপসরণ করিয়া শহর সংলগ্ন গোমতী নদীর তীরে অবস্থান করতে তাকে সন্ধ্যায় শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় কুমিল্লা ইলেকট্রিক পাওয়ার হাউসে টেলিফোনে অনুসন্ধান করিতে গেলে জনৈক ব্যক্তি জানান যে, ইলেকট্রিক সাপ্লাই সাময়িকভাবে বন্ধ রহিয়াছে। এই সঙ্গে তিনি ইহাও জানান যে, পাওয়ার হাউস প্রহরারত পাঞ্জাবী পুলিশ বাহিনী ঠিক সন্ধ্যায় উধাও হইয়া গিয়াছে। তার পরক্ষণেই কুমিল্লা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ হইতে জনৈক বাঙালি পুলিশ জানায় যে, এক্সচেঞ্জে প্রহরারত পাঞ্জাবী পুলিশ দলও পালাইয়াছে এবং যাওয়ার সময় তাহাদের দায়িত্বভার সম্বন্ধে বাঙালি পুলিশ বা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসারের কাহাকেও কিছু বলিয়া যায় নাই। তার পরই আমরা পুলিশ লাইনের নিকটবর্তী এলাকা হইতে অনুনসন্ধান করিয়া জানিতে পারি যে, পুলিশ লাইন হইতেও পাঞ্জাবী পুলিশ বাহিনী এই কারফিউ এবং ব্ল্যাক আউটের সাহায্য লইয়া তাহারা ময়নামতি ক্যাণ্টনমেণ্টে আশ্রয় লইয়াছে।

 ঐ রাত ৯টা হইতে শেষ রাত অবধি শহরতলী এলাকা হইতে খান সেনাদিগকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীরা ধাওয়া করিয়া শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকায় কোণঠাসা করিয়া রাখে। তার পর হইতে যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় ক্যাণ্টনমেণ্ট দখলের অভিযান চলে।

ক্যাণ্টনমেণ্ট বন্দী শিবির হইতে ৩০টি পরিবারের মুক্তিলাভ

 কুমিল্লা শহর বিজয়ের পর খান সেনারা ক্যাণ্টনমেণ্ট বন্দী শিবির হইতে একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেন ও জুনিয়র কমিশণ্ড অফিসারের পরিবারসহ ত্রিশটি পরিবারের লোকজনকে মুক্তি দেয়। কুমিল্লা পুলিশ বাহিনী একটি ট্রাক যোগে কয়েক দফায় উক্ত ত্রিশটি পরিবারের লোকজনকে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় আনা হয়। থানা হইতে তাহারা নিজ নিজ বাড়ীঘর ও আত্মীয়স্বজনের নিকট ফিরিয়া যায়। এই দীর্ঘ আট মাস তের দিন পর মুক্তি পাইয়া মুক্ত এলাকায় পৌঁছিলেও তাহারা সঠিকভাবে জানিতে পারে নাই তাহাদের পরিবারের কর্ত ব্যক্তিরা কোথায় আছে বা আদেী জীবিত আছে কি না।

১৯৭৭ জন বন্দী

 বাংলাদেশ সামিরক বাহিনীর কুমিল্লাস্থ সদর দফতর হইতে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের নবম ব্যাটালিয়নের কমাণ্ডিং অফিসার মেজর আইনুদ্দিন হইতে জানা যায় যে, গত ৮ই ডিসেম্বর হইতে ১৪ই ডিসেম্বর এই সাত দিনে চাঁদপুর হইতে ৭ জন অফিসারসহ ১,৩০০ জন, চান্দিনা হইতে ১১ জন অফিসারসহ ৪০১ জন ও কুমিল্লা হইতে