পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



772



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 জে,সিওসহ ২৭৬ জন মোট ১৯৭৭ জ পাকবাহিনীর সৈনিককে বন্দী করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই আত্মসমর্পণকারী।

বঙ্গশাৰ্দুল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে

ক্যাণ্টনমেণ্ট পতনের মুখে

 বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কুমিল্লার সদর দফতর হইতে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ৯নং ব্যাটালিয়নের কমাণ্ডিং অফিসার মেজর আউনুদ্দিন হইতে জানা যায় যে গত ৬ই ডিসেম্বর হইতে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের এই ব্যাটালিয়ন, সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর ঝাট রেজিমেণ্টের ১৪নং ব্যাটালিয়ন সংগে লইয়া কুমিল্লার পূর্বাঞ্চলে ধনপুর, সুয়াগাজী ও চিওড়ার পাক বাহিনীর তিনটি দুর্ধর্ষ অবরোধকে চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া ৭ই ডিসেম্বর বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ৯নং ব্যাটালিয়ন প্রথম কুমিল্লায় প্রবেশ করে।

 এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বেঙ্গল রেজিমেণ্টের এই ব্যাটালিয়নটি প্রথম কুমিল্লা প্রবেশ করিয়া বর্তমানে শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ময়নামতি ক্যাণ্টনমেণ্টের পারে আঘাত হানিতেছে। এই ব্যাটালিয়ন গত মঙ্গলবার অপরাহ্ন দুই ঘটিকায় দুর্গাপুর গ্রাম হইতে পাক বাহিনীকে পিছু হটাইয়া আরও অগ্রসর হইয়াছে। গত মঙ্গলবার দুর্গাপুর যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাক বাহিনীর সৈনিক হতাহত হয়। এখানে আরও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, কুমিল্লা শহরে প্রবেশকালে পাক বাহিনীর একটি দুর্ধর্ষ গোলান্দাজ বাহিনীকেও এই বঙ্গশার্দুলরা পরাস্ত করিয়াছিলেন।

 বর্তমানে বঙ্গশাৰ্দুল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ক্যাণ্টনমেণ্ট ময়নামতিকে চতুর্দিক হইতে এমনিভাবে ঘেরাও করিয়া অগ্রসর হইতেছে যার ফলে ক্যাণ্টনমেণ্ট হইতে খান সেনারা তাদের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে দলে দলে আত্মসমর্পণ করিতেছে। এছাড়া প্রত্যহ মিত্রবাহিনীর বিমান অনবরত বোমাবর্ষণ করিয়া চলিয়াছে। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন মুহুর্তে এই ক্যাণ্টনমেণ্টের পতন ঘটিবে বলিয়া আশা করা যাইতেছে।



-আমোদ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

ঘানাদার বাহিনীর পলায়ন ও দলে দলে আত্মসমর্পণ :

ঢাকা ঘেরাও : তেজগাঁ দুর্গ কামানের লক্ষের মধ্যে

 বাংলাদেশ, ১৪ই ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী একই সঙ্গে মির্জপুর, নরসিংদী ও দাউদকান্দি হইতে ঢাকার দিকে আগাইয়া চলিয়াছে। ঢাকা এখন তিন দিক হইতে পরিবেষ্টিত।

 গতকাল টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করিয়া মির্জাপুর পর্যন্ত পৌঁছান হইয়াছে। নরসিংদী হইতে অগ্রসরকালে হানাদার বাহিনী বাধা দিলে তাহদের উপর বোমাবর্ষণ করা হয়। খুলনা শহরে তীব্র লড়াই চলিতেছে। ইতিমধ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী বগুড়ার উপকণ্ঠে পৌঁছিয়া গিয়াছে।

 গতকাল দিল্লীতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর জনৈক মুখপাত্র প্রকাশ করেন যে, ২৪ হইতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার চারপাশে সুদৃঢ় ব্যুহ রচনা করা সম্ভব হইবে। এখনই ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্ট মিত্রবাহিনীর আর্টিলারির পাল্লার মধ্যে আসিয়া গিয়াছে।  ইত্যবসরে পদ্মার উপরে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসিয়াছে। এই ব্রীজের পাড়ে পাকশী এবং তারপরই ঈশ্বরদী। গতকাল (মঙ্গলবার) স্থলবাহিনীর সাহায্যে মিত্রবাহিনী ভেড়ামারা, পাবনা, রংপুর, ময়নামতি ও নরসিংদীতে শত্রদের অবস্থানের উপর বোমাবর্ষণ করে।