পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

142 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ লন্ডনে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকা লন্ডন আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র-১ অক্টোবর, ১৯৭১ কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রচারপত্র ‘প্রচারপত্র-১ আওয়ামী লীগ লন্ডন আলোকে আলোকময় জয় জয় জয় জয় বাংলার জয়। পাকিস্তানের ইতিহাস হলো মোনাফেকী, বেঈমানী শাসক ও শোষক চক্রের ইতিহাস। জিন্নার সাধের পাকিস্তান পূর্ব বাংলার মানুষদের জন্য ছিল এক বিরাট ফাঁকি আর ফাঁকিস্তান। পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে, আর এর সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার ও স্তুপীকৃত হয়েছে। শাসন ও সামরিক বিভাগে বাংগালীদের স্থান নেই। জাতীয় সম্পদ হতে বাঙালীরা বঞ্চিত হয়েছে সদাই। সমগ্র পাকিস্তানের মোট রাজস্বের শতকরা ৬২ ভাগ দেশরক্ষা খাতে ব্যয় হয়, শতকরা ৩২ ভাগ খরচ হয় ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায়। মোট রাজস্বের ৯৪ ভাগ বিভিন্ন নামে পশ্চিম পাকিস্তানেই ব্যয় হয়। মাত্র ৬ ভাগ পূর্ব বাংলার ভাগ্য জোটে। যদিও পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের আয়ের শতকরা ৬৪ ভাগ যোগায়। তাই পূর্ব বাংলার মানুষের পরিশ্রমের বুনিয়াদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ইমারত গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষকে পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী গত ২৩ বছর ধরে বাংগালী জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ইসলাম বিরোধী জিগির-বাহানা প্রয়োগ করে আসছে। অতএব বাংলার মানুষ রাজনৈতিক ও স্বাধিকার নিয়ে বাঁচার দাবী উঠালো। শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য অগ্রসর হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ গত ২০ বছর ধরে বাংলার দাবী নিয়ে চরম লড়াই করে আসছে শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পূর্ব বাংলার মানুষেরা পাকিস্তানে জনসংখ্যার অনুপাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হলো। মহান নেতা শেখ মুজিব সমগ্র পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হলেন। পাঞ্চাবী শাসক, শোষকচক্র ও নররক্তপিপাসু পশুরাজ ইয়াহিয়া বাংলার দাবীকে বানচাল করে দেবার জন্য “ডান্ডা দিয়া ঠান্ডা করার খেয়ালে’ ২৫শে মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর সৈন্য বাহিনী বাংলার মানুষের উপর লেলিয়ে দিলেন। বাংলার প্রিয় জননেতা শেখ মুজিবকে বন্দী করলেন। এসব নৃশংস ও নারকীয় কার্যকলাপের কাহিনী আপনাদের সবার জানা। বাংলাদেশকে কলোনীতে পরিণত করে রাখার জন্য অসূর ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ১২ লক্ষ নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করেছে। প্রায় এককোটি মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে আর শত শত নারীকে ধর্ষণ করেছে। দলে দলে তরুণীদের গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন ক্যান্টনমেণ্টে আটক তরুনীদের একেবারে উলংগ অবস্থায় রেখে পাক পশুবাহিনী এক নারকীয় আনন্দ উপভোগ করছে। শত শত তরুণীকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বাংলার আজ বড়ই দুর্দিন। অসহায় ছেলেমেয়ে ও লাঞ্ছিত নারীত্বের ক্ৰন্দনে বাংলার আকাশ বাতাস আজ ভারী। গরীব মানুষের লাখো লাখো ঘরবাড়ি জুলিয়েছে। তাই অসুর ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক ফৌজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি বাহিনী গড়ে তুলেছে। সার্বভৌম ও প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে, বাংলার মাটিতে মুজিবনগরে। বাংলাদেশ এখন পশ্চিম পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধে লিপ্ত। আজ এই জাতীয় সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাক শত্রকে মরণ আঘাত হানতে হবে। ইনশাআল্লাহ বাংলার জয় অনিবার্য।