পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড তাই এরা এবার তাদের পাওনা আদায় করবে কড়ায় গন্ডায়। শেখ মুজিব তার ছ’দফা ভিত্তিক দাবী আদায় না করে ছাড়বেন না। তাতে পাঞ্জাব রাজের শোষণনীতি ব্যাহত হয়ে পড়বে। ধসে পড়বে ঔপনিবেশিক শোষণের পথ, বন্ধ হয়ে যাবে পশ্চিম পাকিস্তানের দালান, ইমারত রাস্তাঘাট ও ড্যাম নির্মাণের কাজ। তাই যেমন করেই হোক বাংলাকে তার দাবী থেকে হঠাতে হবে বন্দুক দেখিয়ে। আর বন্দুকের বাহক পাঞ্জাবী মিলিটারীর সাহায্যে চলতে থাকবে অবাধ শোষণ। ইয়াহিয়া খান ভাবলেন কথা মন্দ নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে দিয়ে যে ভুল করা হয়েছে তাকে শোধরাতে হলে এই একমাত্র পথ। নির্বাচনের পূর্বে যে মনোভাব নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ দিয়েছিলেন, তা আর হয়ে উঠে নি। আশা ছিল মৌসুদী সাহেবকে দিয়ে ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবেন। তাদের পাক্কা ২৩ বছরের অভিজ্ঞতা, বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ রাখার একমাত্র উপায় ইসলাম। তা এবারে আর হয়ে ওঠেনি। মৌদুদীর “ইসলাম ডুবে গেল” কথার অর্থ যে কি, বাংলার জনসাধারণ তা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে বুঝে নিয়েছে। ফল হলো সম্পূর্ণ উল্টো। জয়ী হলো বাংলার ছদফা। ছাই পড়লো বুর্জোয়া মিলিটারী গুষ্ঠি ও শোষণকারী পুঁজিপতিদের মুখে। হেন অবস্থায় কি করা যায়? পাঞ্জাব রাজ যে ডুবে যায়! তাই হুট করে বুদ্ধি নিলেন বন্দুক হাতে নেওয়ার। বন্দুক দেখলে বাঙ্গালী হয়তো আর এগুবে না। তাই বিমান ভর্তি করে আমদানী করা হলো পাঞ্জাবী মিলিটারী। পূর্ব বাংলার পথে-ঘাটে, শহরে-বন্দরে বেরিয়ে পড়ে খুনী ইয়াহিয়ার রক্তপিপাসু নরঘাতকের দল। নারী-শিশু-পুরুষ নির্বিশেষে চালিয়ে গেল আমেরিকান বুলেট। হাজার হাজার বাঙ্গালী রুখে দাঁড়ালো মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে। সবুজ বাংলার শান্তিপ্রিয় সন্তানরা এবার বিপ্লবী হুঙ্কারে বেরিয়ে এল রাজপথে। বিপ্লবীদের রক্তে লাল হয়ে গেল বাংলার মাটি। সবুজ বাংলা লাল হলো মিলিটারীর গুলিতে। এ লালের লেলিহান রক্তিম আভায় লাল হয়ে উঠবে শুধু বাংলা নয়, সমস্ত দুরপ্রাচ্যে। তা প্রতিরোধ করার চেষ্টায় ধ্বংস হয়ে যায় শোষণকারী পুঁজিপতি আর তাদের পদলেহী মানবতার শত্রু বুর্জোয়া শয়তানের দল। হত্যার প্রতিবাদে গত ৫ই মার্চ শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্যগণ পূর্ব পাকিস্তানে মিলিটারী নির্যাতন ও নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ল-নস্থিত পাকিস্তান হাই কমিশন ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। হাই কমিশনের দেওয়ালে দেওয়ালে “জয় বাংলা” “স্বাধীন বাংলা” ইত্যাদি শ্লোগান লাল কালিতে লিখে দেন। ফ্রন্টের সদস্যদের সঙ্গে লন্ডনের কিছুসংখ্যক ছাত্র যোগদান করেন। বিক্ষোভকারীগণ পথচারীদের হাতে তাদের স্মারকলিপি বিলি করেন। হাই কমিশনার সালমান আলীকে সাহেবকে ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল মোজাহিদ স্বাধীনতার দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারপর বিদেশী সংবাদপত্রের সংবাদদাতাদের উপস্থিতিতে ও BBC Television camera-এর সামনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা এবং ইয়াহিয়া খানের ছবি জুলিয়ে এই কথা ঘোষণা করেন যে, বাঙ্গালীদের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানীদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না এবং স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত কোন মতেই তারা সংগ্রাম থেকে পিছপা হবে না।