পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

443 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমান নামধারী এহিয়া-টেক্কার সৈনিকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলের অসংখ্য মুসলমান ছাত্রীদিগকে উলঙ্গ করিয়া তাহাদিগের সতীত্ব নাশ করিয়াছে এবং পরে গুলি করিয়া ও বেয়নেট দিয়া খোঁচাইয়া নিমর্মভাবে হত্যা করিয়াছে। এইরূপ নারীধর্ষণ ও হত্যা পূর্ব বাংলার প্রায় প্রতিটি শহর বন্দর ও গ্রামে অনুষ্ঠিত হইয়াছে। মুসলমান নামধারী এহিয়া-টেক্কার সৈনিকেরা মসজিদে নামাজরত মুসলিমদিগকে হত্যা করিয়াছে ও মসজিদ জালাইয়া দিয়াছে। মুসলমান নামধারী এহিয়া-টেক্কার সৈনিকেরা লাখ লাখ নিরাপরাধ মুসলমান শিশু, বৃদ্ধ ও যুবককে পাইকারীভাবে হত্যা করিতে সামান্যতম কুষ্ঠাও বোধ করে নাই। প্রবল ঘূর্ণিবাত্যায় পূর্ব বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন মারা গিয়াছে তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মানুষই কোন প্রকার সাহায্য কিম্বা দুর্গত এলাকা সফর তো দূরের কথা সমান্যতম সহানুভূতিও জানায় নাই। এহিয়া খানের মুসলমানী শাসনে ঘূর্ণিবাত্যায় নিহত ৩ লক্ষ মুসলমানের যথাবিহীত দাফন-কাফন ও কবর দেওয়ার কোন ব্যবস্থা হয় নাই। এহিয়া-টেক্কার বর্বর সৈনিকেরা পূর্ব বাংলার যে লক্ষ লক্ষ মুসলমানদিগকে নির্বিচারে হত্যা করিতেছে তাহাদিগকে যথাবিহীত দাফ-কাফন-জানাজা ও কবর দিবার ব্যবস্থা করিতেছে না। এই সকল নরপশুরা প্রতিটি মুসলমান জীবন শেষে কামনা করে তাহার মৃত্যুর পর যেন ধর্মীয় বিধানানুযায়ী তাহার সঠিক দাফন, কাফন, জানাজা ও কবর হয়। এহিয়া-টেক্কার বর্বর সৈনিকদিগের পৈশাচিক লীলায় লাখ লাখ মৃত মুসলমানের আত্মা সঠিকভাবে দাফন, কাফন, জানাজা ও কবর না পাইয়া আল্লার দরবারে ফরিয়াদ করিতেছে। মুসলমান হইয়া পশ্চিম পাকিস্তানী ঐ সকল মুসলমানরা পূর্ব বাংলার মুসলমান কৃষক শ্রমিক মজুর ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষদিগের ধনসম্পদ, ধর্ম, সংহতি ও ইসলামের ছলনায় হরণ করিয়া লইয়া তাহাদিগকে হাড়ে মাংসে জরাজীর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে। সোনার বাংলাকে চির দুর্ভিক্ষ-বন্যা-মহামারী দেশে পরিণত করিয়া ফেলিয়াছে। মুসলমান হইয়া পূর্ব পাকিস্তান নামক দেশের এ অংশে তাহারা প্রয়োজনীয় কলকারখানা গড়ে নাই, কৃষির উন্নতি করে নাই, বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে নাই, পূর্ব বাংলার লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নাই, চাকুরী ও ব্যবসাতে পূর্ব বাংলাকে দাবাইয়া রাখিয়াছে, মিলিটারীতে পূর্ব বালার লোক নেয় নাই প্রভৃতি বহুভাবে পূর্ব বাংলাকে ন্যায্য হিস্যা হইতে বঞ্চিত করিয়াছে। অথচ পূর্ব বাংলার এই সকল বিশ্বাসঘাতক দালালেরা কোনদিনই তাহার সামান্যতম প্রতিবাদ করে নাই। বরং এই নিমর্ম শোষণ, অত্যাচার, অবিচার, ধ্বংস-লীলা, গণহত্যায় উহারা সক্রিয় অংশীদার হইয়াছে। আজ তাহারা সুযোগ বুঝিয়া আবার মাথাচাড়া দিয়া উঠিয়াছে। পূর্ব বাংলার ধ্বংসস্তুপের উপরে দাঁড়াইয়া আবার নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়া ২৩ বৎসরের সেই ঘূণেধরা ধসে পড়া শ্লোগান ধর্ম, সংহতি, ইসলাম ও ভারতীয় বিদ্বেষের নামে তাহদের প্রভু পশ্চিম পাকিস্তানী দাবনদিগকে নানাভাবে মদদ যোগাইতেছে। তাহারা পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনসাধারণের মনোবল ভাঙ্গিয়া দিতে চেষ্টা করিতেছে। জনসাধারণের মধ্যে হিন্দুমুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াইতেছে। জনতার সুদৃঢ় একতায় ফাটল ধরাইতে চেষ্টা করিতেছে। মুক্তি সংগ্রামীদিগকে ধরাইয়া দিতেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য ও অবাঙ্গালীদিগের সাথে হাত মিলাইয়া বাঙ্গালী হইয়া বাঙ্গালীদিগের বাড়িঘরে লুটপাট ও আগুন জ্বালাইবার সহযোগিতা করিতেছে।