পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

456 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম | বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় | ১ জুন, ১৯৭১ সমন্বয় কমিটির ঘোষণা কমিটির ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ঘোষণা সম্প্রতি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে অগ্রসর করিয়া লওয়ার যে আহবান ও নির্দেশ দিয়াছেন তাহাকে অবলম্বন করিয়া বাংলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পরিচালিত) কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (দেবেন শিকদারের নেতৃত্বে), শ্রমিক-কৃষক কৰ্মীসংঘ, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (হাতিয়ার), পূর্ববাংলা কৃষক সমিতি, পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন (পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশন) এবং পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতি রাজনৈতিক ও গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে মিলিত হইয়া “বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি” গঠন করিয়াছেন এবং সর্বসম্মতভাবে নিন্মোক্ত ঘোষণা প্রণয়ন করিয়া বাংলাদেশের জনগণের নিকট উপস্থাপিত করিতেছেন। ] বর্তমান পরিস্থিতি সারা বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির জীবনে আজ এক চরম মুহুর্ত উপস্থাপিত। পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট অস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া নিরস্ত্র, নিরীহ, শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশের জনগণের উপর সম্পূর্ণ অপ্রস্তত অবস্থায় শুরু করিয়াছে এমন এক বর্বর হামলা, সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে যাহার তুলনা খুজিয়া পাওয়া যায় না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খিষ্টান, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সমগ্র সাড়ে সাত কোটি জনতাই এই হানাদার দসু্যদের বর্বর নির্যাতনের শিকারে পরিণত হইয়াছে। বাংলাদেশের এমন কোন শহর, গ্রাম বা অঞ্চল নাই যেখানে এই পরদেশ লুন্ঠনকারী দসু্যর দল নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধনসম্পত্তি বিনষ্ট, লুটতরাজ ও নারী নির্যাতন করে নাই। পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট জঙ্গীশাহীর এই হামলা অত্যন্ত আকস্মিক ও বর্বর। দীর্ঘ চবিবশ বছর গোটা বাঙালী জাতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক হইতে চরমভাবে নিপীড়িত হইবার পর এইবারই সর্বপ্রথম জাতীয় মুক্তির আশার আলো দেখিতে শুরু করিয়াছিল। জাতীয় মুক্তি এই সুতীব্র আকাঙ্খা লইয়াই বাংলাদেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্ৰ-মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবি তথা সমগ্র জনতা ইতিপূর্বে বারবার রক্তঝরা সংগ্রামের পথে অগ্রসর হইয়াছিল। এই জনতাই মুক্তির দুর্বার আকাঙ্খা লইয়া হাজার হাজার বীর সন্তানের রক্তের বিনিময়ে সৃষ্টি করিয়াছিল ১৯৬৮-৬৯ সালের গৌরবোজ্জ্বল সুমহান গণঅভু্যত্থান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলার জনগণ আবার সেই জাতীয় মুক্তির কামনাকেই বুকে করিয়া একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগকে ভোটদান করিয়াছিল। তাহারা আশা করিয়াছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে দীর্ঘ চবিবশ বছরের নিপীড়ন ও নির্যাতনের অবসান ঘটিবে। কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে নিরস্ত্র অপ্রস্তুত জনতার উপর নামিয়া আসিল শাসকগোষ্ঠীর সশস্ত্র হামলা। তবে এই হামলা জনগণের আকাঙ্খা অবদমিত করিতে পারে নাই বরং শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণাকে আরও বেশী করিয়া তীব্র করিয়া তুলিয়াছে। তাই অপ্রস্তুত অবস্থায় হইলেও জনগণ প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করিয়াছে। যে যেভাবেই পারিয়াছে সশস্ত্র আক্রমণের পাল্টা আক্রমণ করিয়াছে। বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই পি আর, পুলিশ ও বাংলার অসংখ্য তরুণ হানাদারদের বিরুদ্ধে শুরু করিয়াছে সশস্ত্র অভিযান। বাংলাদেশের জনগণ আজ নির্মম অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়া এই শিক্ষা লাভ করিয়াছে যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আপসের পথে বাংলার জনগণকে বাঁচিয়া থাকার তাগিদেই আজ হানাদার দসু্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই অব্যাহত রাখিতে হইবে।