পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

458 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড তাই জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের এই পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি জনগণের নিকট নিন্মলিখিত করণীয় কর্তব্য উপস্থিত করিতেছেঃ ১। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে জনতার বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধি সমবায়ে সর্বদলীয় গণ-মুক্তি পরিষদ গঠন করিতে হইবে। এই গণমুক্তি পরিষদ গ্রামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও সর্ববিধ কর্তৃত্ব গ্রহণ করিবে, গ্রামরক্ষীবাহিনী গঠন ও পরিচালনা করিবে এবং গণ-আদালত গঠন করিয়া বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করিবে। ২। পাক-জঙ্গশাহী সরকারকে দেয় খাজনা, ট্যাক্স, ঋণ ও সুদ পরিশোধে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখিতে হইবে। ৩। যাহারা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় প্রয়োজনতিরিক্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখিবে গ্রাম গণ-মুক্তি পরিষদ তাহাদের সেই উদ্ধৃত্ত খাদ্যশস্য বাজেয়াপ্ত করিয়া গরীব জনসাধারণের মধ্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিবে। ৪। গ্রাম গণ-মুক্তি পরিষদ গ্রামে গরীব-জনসাধারণের উপর নিপীড়নমূলক মহাজনী ব্যবস্থা বন্ধ করিবে। ৫। (ক) যাহারা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সহিত কোন প্রকার সহযোগিতা ও সাহায্য প্রদান করিবে অথবা চর হিসাবে কাজ করিবে, গ্রাম গণ-মুক্তি পরিষদ তাহদের কঠোরতম শাস্তি প্রদান করিবে এবং তাহাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়া গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে। খ) যে সকল জোতদার জাতীয় মুক্তির সপক্ষে থাকিবে তাহদের সহিত পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে যাহাতে গরীব কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের উপর জোতদারের পূর্বতন শোষণ লাঘব হয়। ৬। বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক বাস্ত্তহারা হইয়া দেশত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছেন গ্রাম গণ-মুক্তি পরিষদ তাহদের যাবতীয় সম্পত্তি তত্ত্বাবধান করিবে। ৭। যথোপযুক্ত বিলিবন্টন, উৎপাদন বৃদ্ধি, কেনাবেচা, কুটিরশিল্পের বিকাশ সাধন প্রভৃতির মাধ্যমে গ্রাম এলাকায় আত্মনির্ভরশীল স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়িয়া তুলিতে হইবে। এই ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হইবে °IR"fRE TRRU 3 :RCTfREi (mutual aid and mutual cooperation) ৮। শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জাতীয় ভাবধারা সৃষ্টি করিতে হইবে। প্রচলিত শিক্ষা ও কলুষিত সাংস্কৃতিক রীতিনীতি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করিতে হইবে। ৯। (ক) গ্রামে গ্রামে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র ও অন্যান্য জঙ্গী তরুণদের সমবায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গেরিলাদের গঠন করিতে হইবে। এই গেরিলাদল সুযোগ ও সুবিধামত বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত শত্রকে খতম ও ক্ষতিসাধন করিবে এবং শত্রর অস্ত্র কড়িয়া লইয়া নিজেদের অস্ত্রবল বৃদ্ধি করিবে। (খ) হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে যাহাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা, অস্ত্র-শস্ত্র, রসদপত্র সংগ্রহ ও সরবরাহ করিতে না পারে এবং নির্বিবাদে শাসন ও শোষণ চালাইতে না পারে, তাহার জন্য সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সরবরাহ লাইন ইত্যাদির ক্ষতিসাধন করিতে হইবে। (গ) গেরিলাদলকে জনগণের আস্থা ও ভালবাসা অর্জনের জন্য -জনগণকে শ্রদ্ধা করিতে হইবে। -জনগণকে সাহায্য করিতে হইবে। -জনগণকে রক্ষা করিতে হইবে। (ঘ) গেরিলা দল সামরিক দায়িত্ব সম্পাদনের সাথে সাথে জনগণের মধ্যে জাতীয় মুক্তির সপক্ষে রাজনৈতিক প্রচার আন্দোলনও চালাইবে।