পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

460 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড

  • বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে যাহারা শহীদ হইয়াছেন, যাঁহারা লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হইয়াছেন, সর্বস্ব হারাইয়াছেন, এই সমন্বয় কমিটি তাহাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করিতেছে। যাহারা চরমভাবে নির্যাতিত হইয়া শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হইয়াছেন, এই সংস্থা মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে তাহদের নিরাপদ পুনর্বাসনের জন্য সংগ্রামের সংকল্প ঘোষণা করিতেছে।
  • বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-যুবক, বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই পি, আর, পুলিশ, আনসার, মোজাহিদ এবং সকল স্বেচ্ছাসৈনিকেরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হইয়া স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে যে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করিতেছেন এই সমন্বয় কমিটি তাহাদের প্রতি সংগ্রামী অভিনন্দন জ্ঞাপন করিতেছে।
  • বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রতি এবং বাস্তহারা শরনার্থীদের প্রতি ভারতীয় জনগণ বিশেষ করিয়া পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ের জনগণ ও যে সাহায্য ও সগযোগিতা করিয়াছেন তাহার জন্য এই সমন্বয় কমিটি তাহদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছে।
  • এই সমন্বয় কমিটি সিন্ধী, বালুচ, পাঠান, পাঞ্চাবী জনগণ বিশেষ করিয়া শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী জনগণের নিকট পাকিস্তানী ফ্যাসিস্ট জঙ্গী শাসকচক্রের বাংলাদেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সপক্ষে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার আহবান জানাইতেছে।
  • এই সমন্বয় কমিটি বিশ্বের সকল স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিকট বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে সর্বতোভাবে সাহায্য করিবার আবেদন জানাইতেছে। অফুরন্ত জনবল আমাদের রহিয়াছে, অর্থ রসদ, ঔষদপত্র ও নৈতিক সমর্থন।
  • এই সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিসংগ্রামরত সকল শক্তির সহিত সংযোগ ও সমন্বয় সাধন করিয়া জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাফল্যের পথে অগ্রসর করিয়া লইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছে।
  • এই সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-সংগঠন ও গণসংগঠন এবং ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে “জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট” গঠন করিয়া গণ-যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা ও বাংলাদেশের মাটি হইতে উৎখাত করিবার জন্য উদাত্ত আহবান জানাইতেছে। এই সংস্থা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, যেহেতু জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র জনতার লড়াই, সেই জন্য সমগ্র জনতার আশা আকাঙ্খার পরিপূরক একটি সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ জাতীয় মুক্তিফ্রন্টই তাহাকে নিশ্চিতভাবে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে অগ্রসর করিয়া লইয়া যাইতে পারে।

বাংলার সংগ্রামী জনতা! সারা বাংলাদেশ ব্যাপী মরণপণ যুদ্ধ চলিতেছে- স্বাধীনতার যুদ্ধ। লাঞ্ছিত জাতির অপমান মোচনের, পরাধীন দেশমাতৃকার শৃংখল মোচনের এই জীবন-মরণ লড়াইয়ে আমরা সকলেই শরীক হইয়াছি। বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধের ক্ষান্তি নাই, শ্রান্তি নাই। যে দসু্যর দল আমাদের পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নী, পুত্র-কন্যাকে হত্যা করিয়াছে, মা-বোনের সম্ভব বিনষ্ট করিয়াছে, আসুন, আমরা তীব্র প্রতিহিংসার জ্বালা ও ঘৃণা লইয়া সেই দস্যর উপর সশস্ত্রভাবে ঝাঁপাইয়া পড়ি। তাহাকে খতম করি। রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ করি। আমাদের যুদ্ধ ন্যায়ের যুদ্ধ। তাই জয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী। পাকিস্তানী হানাদার দসু্যর পরাজয় অনিবার্য। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। -স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। -জনতার সশস্ত্র বিপ্লব জিন্দাবাদ। ১লা জুন ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি