পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

465 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড এই গেরিলা যুদ্ধের রূপ হয় প্রধানত জাতীয় শত্রু খতম করা। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েক শত জাতীয় শক্ৰ খতম করা হয় ; পাক সামরিক দস্যদের একখানি লঞ্চ আক্রমণ করা হয় এবং প্রায় তিরিশজন সামরিক দস্যকে খতম করা হয়, দুজন পুলিশসহ দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি স্পীড বোট দখল করা হয়। মে মাসের প্রথম থেকে শুরু করে প্রায় দেড়মাস সময়কালীন এ অঞ্চলের গেরিলা যুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক দস্যরা এত ভীতসন্ত্রস্ত হয় যে, তারা বরিশাল জেলার প্রায় সমস্ত সৈন্য এবং অনেক থানার পুলিশ নিয়ে এ অঞ্চল ঘেরাও করে। তারা জলপথে কারফিউ জারী করে, গানবোট, স্পীডবোট, লঞ্চ দিয়ে দিনরাত কেটে ফেলে-কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সন্ধান তারা পায়নি। মুক্তিবাহিনী তাদের ঘেলাও পার হয়ে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় শত্রুখতমের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কোন শক্তিই তাদেরকে ধ্বংস করতে পারবে না। বরিশালের গেরিলা যুদ্ধের সমর্থনে পূর্ব বাংলার অন্যান্য স্থানে জাতীয় শত্রুখতমের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ চলছে। סי পূর্ব বাংলার জাতীয় প্রশ্ন নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে মেতেছে। তারা লুণ্ঠন-শোষণ বজায় রাখা এবং চীন জনগণ কমিউনিজম বিরোধিতার জন্য গোটা পাকিস্তান ও ভারত যৌথ সামরিক জোট বা পূর্ব বাংলা-ভারত যৌথ সামরিক জোট স্থাপনের দ্বিমুখী লক্ষ্য সামনে রেখে, তাদের সমর্থকদের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার জাতীয় সংগ্রামকে ব্যবহার করছে। পাকিস্তান যাতে তাদের হাতছাড়া না হয় এ জন্য তারা একে সাহায্য ও সহায়তা করছে। এ উদ্দেশ্যে তারা নিজেদের মাঝে সহযোগিতা করছে আবার পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের উপর একচেটিয়া প্রভাব স্থাপনের জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ এই চার পাহাড়ের শোষণের প্রতিনিধিত্বকারী ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী তাদের সমর্থকদের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার মুক্তিসংগ্রাম সমর্থন ও সহায়তা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো পূর্ব বাংলায় এই চার পাহাড়ের শোষণ ও লুণ্ঠন কায়েম করা এবং চীনবিরোধী, জনগণ ও কমিউনিষ্ট বিরোধী বাংলা-ভারত যৌথ সামরিক জোট স্থাপন করা। ফৌজ ও সরকার গঠন করে এবং জাপান-জার্মান ফ্যাসিস্টদের মিত্র হিসেবে কাজ করে। জাপানী ফ্যাসিস্টদের সহায়তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আজাদ হিন্দু ফৌজ ও সরকারকে নিজের সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা এবং বৃটিশদের উৎখাত করে নেতাজীর নেতৃত্বে পুতুল সরকার গঠন করে ভারতকে তাদের সাম্রাজ্যভুক্ত করা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরাজয় জাপানীদের এ স্বপ্ন নস্যাৎ করে দেয়। এভাবে প্রতিক্রিয়াশীলদের সহায়তায় ভারতকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের সহায়তায় কখনই পূর্ব বাংলা বা বিশ্বের অন্য কোন দেশ, জাতি ও জনগণের সত্যিকার মুক্তি আসতে পারে না। এদের সহায়তা জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে হয় বানচাল করবে বা জাতীয় মুক্তির নামে চার পাহাড়ের শোষণ ও লুণ্ঠন পূর্ব বাংলায় কায়েম করবে। পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক জনগণ ও বিশ্বের বিপ্লবী জনগণ পূর্ব বাংলার জাতীয় প্রশ্নে সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের এ সকল জঘন্য চক্রান্তকে কখনই সমর্থন করতে পারে না।