পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

467 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম ২৫ জুন, ১৯৭১ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ BANGLADESH CENTRAL STUDENT'S ACTION COMMITTEE বাংলাদেশের মুক্তিকামী ভাই-বোনেরা, বিশ্বের ইতিহাসের জঘন্যমত গণহত্যাকারী, রক্তলোলুপ, খুনী, লম্পট, মদখোর, পিশাচ ইয়াহিয়া ও তার পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুলেট, বেয়নেট, ট্যাঙ্ক, কামান, আর পাশবিক অত্যাচারে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের গণজীবন আজ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করার জঘন্য ষড়যন্দ্রকারী খুনী ইয়াহিয়া ও তার হানাদার বাহিনী বিনা নোটিশে বাংলার নিরস্ত্র মানুষের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধের সমস্ত আইনকানুন উপেক্ষা করে ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত বাংলার শহর, কলেজ, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজার, দোকানপাট। বাংলাদেশের একের পর এক তল্লাশী করে সক্ষম যুবকদের মেশিনগানের শিকারে পরিণত করছে। লক্ষ লক্ষ নিরীহ পরিবারকে করছে গৃহহারা। বর্বর সেনাবাহিনীর অত্যাচার এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের মা-বোনেরাও রক্ষা পায়নি তাদের পাশবিক অত্যাচারের হাত থেকে। পিতার সামনে যুবতী মেয়েকে, স্বামীর চোখের সামনে স্ত্রীকে নিয়ে পাশাবিক অত্যাচার চালাচ্ছে। শত শত মা-বোনকে ধরে নিয়ে তাদের ইজ্জত নষ্ট করে তাদেরকে উলঙ্গ করে ফেলে রাখছে পথে-প্রান্তরে। প্রতিদিন শত শথ যুবকের রক্ত নিয়ে মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এই বর্বরতা থেকে রেহাই পায় না দুধের শিশু আর বৃদ্ধরাও কিন্তু মাতাল ইয়াহিয়া বাহিনীর এই পাশবিক অত্যাচার পারেনি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্দ করতে। ২৫শে রাতে গ্রেফতারের পূর্বে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব “স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ” ঘোষণা করেছেন। নেতার নির্দেশ বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে পৌছানোর সাথে সাথে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই পি আর বাহিনী, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও মুক্তিবাহিনী এক হয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলার সাড়ে সাত কোটি কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবি, মেহনতি মানুষও পাকিস্তান উপনিবেশবাদের শৃঙ্খল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার নিয়েছে এক ইস্পাতকঠিন শপথ। পৃথিবীর যে-কোন বৃহৎ শক্তিকেই বাংলার এই মুক্তিসংগ্রামের কাছে মাথা নত করতে হবে। কারণ এ সংগ্রাম বাঙালী জাতির বাঁচার সংগ্রাম, এ সংগ্রাম সত্যের সংগ্রাম। দিনের পর দিন জনতার মুক্তি মিছিল এগিয়ে চলেছে সাফল্যের স্বর্ণশিখরের দিকে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরবিক্রমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করে চলেছে। প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের আক্রমণে শত শত পাকিস্তানী হানাদার শক্র নিহত হতে চলেছে। ইতিমধ্যে প্রায় বিশ হাজার পাকিস্তানী শত্রসেনাকে খতম করা হয়েছে। বাংলার প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনদের মনে রাখতে হবে শেখ মুজিব আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে নাই। ইচ্ছা করলে তিনি বাংলার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে কুচক্ৰী ইয়াহিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। জালেম ইয়াহিয়ার কাছে মাথা নত করেননি বলেই ২৫শে মার্চের সেই নারকীয় বিভীষিকার রাতে জেল-জুলুম আর মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে সরাসরি বাংলার স্বাধীনতা