পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

469 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড হবে মৃত্যুদন্ড। শরনার্থীদের মধ্যে ঢুকে কেউ যাতে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য আপনারা অবশ্যই সজাগ থাকবেন। ৬০ লক্ষ শরনার্থীর প্রতি ভারত সরকার ও ভারতের জনগণ যে মানবতাবোধ দেখিয়েছেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ ও বাংলার জনগণ তা চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বাংলাদেশে পৈশাচিক ইয়াহিয়ার নরহত্যা আজ যখন পৃথিবীর ইতিহাসকে স্তব্ধ করে দিয়ে এক নতুন কলঙ্কের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তখন বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের কোন কোন বৃহৎশক্তি আজ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করছে। আমরা সেইসব বৃহৎশক্তিবর্গকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই আমরা আজ বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, কোন প্রকার আপসের মাধ্যমে এর সমাধান করা যাবে না কারণ স্বাধীনতা কোন আপস মানে না। স্বাধীনতা ভিক্ষা করে আসে না। আমরা তাই কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। তবে আমাদের এই মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা যারা করবেন, বিশ্বের জাগ্রত বিবেকের সামনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করছে দেখেও যারা নীরব আছেন, ইতিহাস তাদের হবে, মানবতার শত্রু হয়ে চিহ্নিত থাকতে হবে। খুনী ইয়াহিয়া-জানি লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত নিয়েও তোমার পিপাসা আজও মেটেনি। কিন্তু তুমি জেনে রাখ, যেসব পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, সিন্ধী সেনাবাহিনীকে দিয়ে তুমি বাংলার লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ, নিরস্ত্র নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছ বাংলাদেশকে পুড়ে ছারখার করছ, তাদের একটিকেও আমরা বাংলাদেশ থেকে ফিরে যেতে দেব না। একটি একটি করে তাদের হত্যা করব। বঙ্গোপসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে স্বচক্ষে প্রতিটি পাকিস্তানী সেনার লাশ তোমাকে দেখতে হবে। জানি বাংলাদেশ থেকে তুমি অনেক দূরে আছ। বাংলাদেশ থেকে তোমার পোষা হানাদারদের হত্যা করে শেষ করলেই যুদ্ধ শেষ হবে না। সেদিন বেশী দূরে নয় বাংলাদেশ থেকে তোমার পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে তোমাকে আর তোমার সেনাবাহিনীকে খতম করব। তোমার সাধের পশ্চিম পাকিস্তানকে ভেঙ্গে চুরমার করে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে পাকিস্তানের নাম নিশানা মুছে ফেলবো। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের একটি দৃঢ় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। স্বাধীনতা আমাদের ভোগ করার জন্য নয়। আমাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের উত্তরসূরীদের জন্যই এ স্বাধীনতা। আমরা মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছি। হয়তো আমরা কেউ আর মায়ের কোলে ফিরে যাব না কিন্তু যারা আমার বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, যারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করছে তাদের প্রতিশোধ যদি আমরা নিতে না পারি তাহলে ইতিহাসের পাতায় আমাদের মীরজাফর হয়ে বেঁচে থাকতে হবে- আজীবন পাঞ্জাবের গোলাম হয়ে থাকতে হবে। পিঠে বুলেট খেয়ে আমরা যেন বিশ্বাসঘাতকতা না করি। আমরা প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বুকে বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হব। এতে যদি একটি একটি করে আমাদের সবাইকে শহীদ হতে হয় তাহলেও সে রক্ত বৃথা যাবে না। শহীদের রক্তে রঞ্জিত প্রতিটি ধূলাকণা সেদিন এক একটি বুলেট হয়ে শত্রদের খতম করবে। বাংলাদেশের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলার এই স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে যে মায়ের সন্তান শহীদ হয়েছে সে মা কাঁদবে না, সে মায়ের চোখের অশ্রু হবে বারুদ- যে বারুদ পুড়ে ছারখার হবে ইয়াহিয়া ও তার সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে লাখ লাখ সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই বীর শহীদদের। জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা। শাজাহান সিরাজ সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ: সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।