পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

481 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড বন্ধুরা আমার, জনগণের সমর্থন আদায় করতে হলে আমাদের প্রত্যেকের কার্যকলাপে জনগণের বন্ধু, জনতার বন্ধু, নির্যাতিত চাষীর বন্ধু বলে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। অত্যাচারী মিল মালিকের বিরুদ্ধে আমরা নির্যাতিত শ্রমিকের বন্ধু। বাংলার মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবির আমরা বন্ধু। এই বন্ধুত্ব প্রকাশের প্রধান উপায় হলো আওয়ামী লীগের প্রণীত ম্যানিফেষ্টোকে বার বার জনগণের সামনে তুলে ধরা। আওয়ামী লীগ ভোট পেলে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে সমস্ত প্রতিশ্রুতি আমরা পালন করব। এই মুহুর্তে মুক্তিসেনানীরা যে অঞ্চলকে শত্রমুক্ত করবে সেই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা, অর্থনৈতিক, সামাজিক সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, তাকে বাহ্য রূপ দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজে নামবেন। মনে রাখতে হবে, সেনাবাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করে যে স্বাধীনতাকে তারা অর্জন করে দেবে, সেই স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পটভূমিকায় রূপে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। তাই বন্ধুরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের নীতি আদর্শে আপনারা অটল থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হচ্ছে আমাদের আদর্শ। বিশ বছরের ক্রমাগত সংগ্রামের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে এই আদর্শকে আমরা আজকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরছি। অসাম্প্রদায়িকতা বা ‘সেকুলারিজমের মহান আদর্শ বহু পরীক্ষানিরীক্ষার ভিতর দিয়ে এই আদর্শকে আমরা আজকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরছি। অসম্প্রদায়িকতা বা সেকুলারিজমের মহান আদর্শ বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছি। এই একটি বিষয়ে আপনাদের স্পষ্ট থাকতে হবে। কোন প্রকারে সাম্প্রদায়িকতার মালিন্যে যেন আওয়ামী লীগের সদস্যবৃন্দের নাম কলঙ্কিত না হয় সে বিষয় আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। গণতন্ত্র অর্থই হলো অসাম্প্রদায়িকতা। যেখানে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি সেখানে গণতন্ত্র কোনদিন কার্যকর হতে পারে না। আজ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলেই অসাম্প্রদায়িকতা বা সেকুলারিজমে বিশ্বাস করতে হবে। বাংলার প্রতিটি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্ৰীষ্টানেরা মনে প্রত্যয় জন্মাতে হবে যে আপনারা সবারই বন্ধু আর ভবিষ্যৎ বাংলার সুখ আর সমৃদ্ধিকে সবাই আপনারা রূপ দিতে যাচ্ছেন। করেছি এ প্রশ্নে কারো মনে সন্দেহ থাকা উচিত নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত মালিকানা হ্রাস করতেই হবে। এই যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্ৰীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক মালিকানা অর্জন করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মাধ্যমে আপনাদেরকে দেশ গঠনের কাজে অগ্রসর হতে হবে। বন্ধুরা আমার, আদর্শের উপর ফাটল যেন না হয়। বাংলার স্বার্থে পৃথিবীর যে দেশের সঙ্গে যে কোন জায়গায় বন্ধুত্ব করা দরকার তা আমরা করব। নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি আমাদের অবলম্বন বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার জন্য আমরা সেই সমস্ত জাতির পাশেই দাঁড়াব। বহু রক্তের বদলে, বহু দুঃখের রজনী পার করে আমরা জেনেছি স্বাধীনতার লড়াই কি। আমরা জেনেছি সাম্রাজ্যবাদীরা যারা এখনো পৃথিবীর দিকে দিকে বিভিন্ন জাতিকে পদানত করে রেখেছে, সেই সমস্ত পদদলিত জাতির বুকের মর্মজ্বালা কি। একদিন আমেরিকাকে বৃটিশ রাজ্যের অধীন থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল। বোস্টনের বন্দরে যেদিন জাহাজ ডুবিয়ে দিল, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এবং জর্জ ওয়াশিংটনের অসি ঝলসে উঠল বোস্টনের তীরে তীরে। আর জেফারসনের বলিষ্ঠ কণ্ঠ যেদিন মানবতার জয়গান গাইল, সেদিনের আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করেছিল। তাহলে কেন আজ সাম্রাজ্যবাদী ইয়াহিয়ার জন্য অস্ত্র আসছে? আমি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে আপনাদের তরফ থেকে মনের বেদনা প্রকাশ করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে। বহু সংগ্রামের ভিতর দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়াকে তার জাতীয় স্বাধীনতা বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বীর রুশ জাতি স্বাধীনতার স্বর্ণশিখরে উপস্থিত হয়েছিল। আপনাদের মাধ্যমে আর একবার আমি মহান রুশ জাতির কাছে আবেদন জানাই, তারা এই স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াক। চিরকাল বাংলার মুক্তিকামী মানুষ সোভিয়েত রাশিয়ার মানুষকে স্মরণ করবে।