পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

483 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড দীর্ঘকাল বহু সুখে-দুঃখে আমরা আপনাদের পাশে পাশে ছিলাম। আমার প্রিয়তম নেতা শেখ মুজিবর রহমান স্নেহ করতেন, ভালবাসতেন, আপনারা দীর্ঘকাল দিয়েছেন, স্নেহ দিয়েছেন, কোনদিন কে আমরা আপনাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছি? বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস, আপনাদের স্নেহ-ভালবাসার বিনিময়ে আমরা কি কোনদিন আপনাদের আদর্শ থেকে বিচু্যত হয়েছি? ২০-২২ বছরের ইতিহাস যদি একথা বলে সুখে-দুঃখে জয়-পরাজয়ে গৌরবে-আগৌবরে আপনাদের পাশে পাশে ছিলাম। আপনাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করি নাই। আজ আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জনাব আবার আপনারা বিশ্বাস করুন। দেখুন আমরা কি করতে পারি, যদি না পারি তবে শুধু আপনাদের কাছে নয় অনাগত ভবিষ্যতের কাছে আমাদের কি জবাবদিহি করতে হবে না? আমার বিশ্বাস আমার মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং আমার প্রধান সেনাপতিও এ সম্বন্ধে সজাগ। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সালে এই তিন বছর আমি আপনাদের পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু এই তিন বছর কারাগারে ছিলেন। আইয়ুব-শাহীর দাপট আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমি দেখেছি তখনও আপনারা অধৈর্য হন নাই। আমি কোনদিন ধৈয্য হারাই নাই। বহুবার আপনাদের বলেছি, সংগ্রামে জয়ী হতে হলে ধৈর্যের প্রয়োজন। বহুবার সংগ্রামের বহু কৌশল নিয়ে আপনাদের সাথে আমার মতবিরোধ হয়েছে। আজ আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আমার প্রবর্তিত কৌশলের ফলে আমরা ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত তথা আইয়ুবশাহীকে খতম করেছিলাম। বিশ্বাসের বলে আপনারা আমাকে বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী হিসেবে প্রধান সহ-সভাপতি করেছিলেন। এই বিশ্বাসের বলে আপনারা আমাকে জাতীয় পরিষদে ডেপুটি নেতা করেছিলেন। আমি জানি, এই বিশ্বাসের বলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আবার আপনারা আমাকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার ভাগ্য এই যে, আমার নেতা, আমার ভাই, আমার প্রিয়তম বন্ধু শেখ সাহেব যখনই যান, তার অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব গাড়ে পড়ে যায়। সেই কাজ চিরকাল আপনাদের পাশে পাশে থেকে করেছি। আজও আপনাদেরকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি-যদি বিশ্বাসঘাতকতা করি, যদি সংকল্পে কোনরকম মলিনতা দেখেন, যদি আপনাদের নীতি ও আদর্শ থেকে কোনদিন বিচূতি দেখেন, আপনারা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেন। কিন্তু বাংলার এই সংকট মুহুর্তে, জাতির স্বাধীনতার এই ক্রান্তিলগ্নে যেখানে শত শহীদের রক্তে আজকে ইতিহাস লেখা হয়েছে, আর যেখানে হাজারে হাজারে সৈনিক আজকে বনে-প্রান্তরে ইতিহাস লিখে চলেছে, সেই মুহুর্তে আর একবার আপনারা আস্থা স্থাপন করুন। আমার বন্ধু তাজউদ্দিন সাহেব দীর্ঘদিন আপনাদের পাশে পাশে সংগ্রাম করেছে, বহু জেল খেটেছে। আমার ভাই মোস্তাক সাহেব, মনসুর সাহেব, কামরুজ্জামান সাহেব দীর্ঘকাল সংগ্রামের পরীক্ষিত সেনাপতি। তাঁদের উপর আপনারা আস্থা স্থাপন করুন। একথা আমি বলব না, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে সমালোচনা আপনারা করবেন না। সমালোচনার উদ্দেশ্য হবে একটি- কী করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করা যায়। আর যদি বাংলার স্বাধীনতা এই মন্ত্ৰীসভার নেতৃত্বে একদিন অর্জিত হয়, সেই গৌরব আপনারা নেবেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা নেবেন, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ নেবেন, মুক্তিযোদ্ধারা নেবেন। আর সেদিন যদি শুধু কিছু ধন্যবাদ, মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেন, তবে আমি কৃতাৰ্থ হব। আপনাদের সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। -জয় বাংলা