পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

490 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ছাত্রলীগকেন্দ্রীয় সংসদ সভাপতি নুরে__ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ১৭ জুন, ১৯৭১ আলম সিন্দীকীর বক্তৃতা দলিলপত্র ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ বাংলাদেশ ৪২ বলাকা ভবন ঢাকা ংলার স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে দুঃখিনী মায়ের যেসব দুরন্ত নির্ভীক ছেলেরা আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন, শত্রর রক্তেস্নাত হয়ে বাংলাকে শত্রমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়বোধে উদ্বুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আমার, আপনারা আমার সংগ্রামী অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আজ হতে তিন মাস আগে রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে পশ্চিমা গৃধিনীর দল ধ্বংসের উন্মত্ততায় পাগল হয়ে যখন আমার বাংলার নিরীহ নিরস্ত শান্তিপ্রিয় মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নারীর করুণ আর্তনাদে বাংলার মাটি যখন ডুকরে কেদে উঠেছিল, তখন সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, আপনারা প্রতিহিংসার অগ্নিশিখা হাতে নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন, মৃত্যুর নিশ্চিত সম্ভাবনা জেনেও আপনারা দুঃখিনী মায়ের ডাকে সেদিন পাগলের মতো ছুটে আসতে পেরেছিলেন বলেই আজ বাংলার মাটিকে শত্রর কবলমুক্ত করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। স্বাধীনতার এই সংগ্রামে আপনাদের আত্মত্যাগের কথা যখন আমি ভাবি, আর্তের বেদনার মাঝেও সম্ভাবনার বাণী আমাকে উজ্জীবিত করে। বাংলার ছেলেরা স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোস নাই, আত্মত্যাগের প্রশ্নে পিছু হটে নাই, নির্যাতনের কাছে মাথা নিচু করে নাই, অত্যাচারীদের ক্ষমা করতে শেখে নাই। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমরা মুজিব ভাইকে কথা দিয়েছিলাম ছয়-দফাকে অস্বীকার করা হলে বাংলার শ্যামল মাটিতে রক্ত ঢেলে স্বাধীনতার জয়গান আমরা লিখে দেব। বাংলার বিভিন্ন রণাঙ্গনের কথা আমি যখন ভাবি তখন আমার বার বার মনে পড়ে, মুজিব ভাই, তুমি এসে দেখে যাও, তোমার বাংলার ছেলেরা কি অপূর্ব রণসাজে আজ প্রস্তুত হয়েছে। আমার মনে হয়, বরকতকে ডাক দিয়ে বলি, ভাই বরকত, জীবনের ওপার হতে তুমি চেয়ে দেখো, তোমার রক্ত আমাদের বুকে কি প্রতিহিংসার আগুন জুলিয়েছে। ভাই মনুমিয়া, বুলেট হাতে তোমার সাথীদের আজ তুমি দেখ। তোমার সাথী-সঙ্গীদের হৃদয়ে আজ প্রতিহিংসার প্রচন্ড উন্মত্ততা। সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, মাতৃত্বের ঋণ শোধ করার তাগিদ আজ প্রাণের চেয়েও বড়। তাই জীবন দিয়ে আমাদের জীবনের সম্ভার সাজাতে হবে। শক্ৰ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার আগুন জুলিতে হবে। মৃত্যুকে যারা ভয় করে, ... ভ্ৰকুটি দেখে যারা থমকে দাঁড়ায়, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার কজায় যাদের জোর নেই, রক্তের বদলে রক্ত নেওয়ার উন্মাদনায় যাদের অভাব-এ পথ তাদের নয়। এ পথ তাদের যাঁরা প্রতিহিংসার আগুনে আজ জুলছে, এ পথ তাদের যারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে শিখেছে, এ পথ তাদের যারা বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার অক্ষর লিখতে পারে। সংগ্রামী বন্ধুরা আমার- এ পথ তাই তোমাদের। শত অভাব-অভিযোগ, অনটনের প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে তোমাদের এ যুদ্ধ আজ একথাই প্রমাণ করে এ যুদ্ধে বিজয়ের মালা তোমরা ছিনিয়ে আনবে। আজ আমাদের শপথ-রক্তে আনো লাল, রাত্রির বৃন্ত হতে ছিড়ে আনো ফুটন্ত সকাল। সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, পশ্চিমা শত্রসেনারা পাশবিকতার জঘন্য প্রবৃত্তিতে উন্মত্ত হয়ে ধ্বংসের যে তান্ডবলীলা চালিয়েছে, তা বর্ণনা করতে আমি পারব না। গতবারেও তা বলেছি। গর্ভবতী মায়ের পেট চিরে দিতে চায়।