পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

492 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড করে নাই, যে মানুষ ট্যাক্স দেয় নাই, যে মানুষ অফিসে যায় নাই, যাদের ঐক্যে চির ধরে নাই- বিজয় তাদের সুনিশ্চিত, একথা আমি হলপ করে বলতে পারি। বেঈমান এহিয়া একটি বক্তৃতা করেছেন। তার ধৃষ্টতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে, যুদ্ধে মার খেয়ে আজ রক্তপিপাসু শোষক বেসামাল হয়ে গেছে। নইলে আমরা বুঝতে পারি না, বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করার দুঃসাহস এহিয়া পেলো কোথা হতে? এহিয়ার জানা উচিত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এহিয়ার জানা উচিত, দশ লক্ষ মানুষের লাশের তলায় পাকিস্তানের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে। পাকিস্তান আজ একটা মৃত লাশ ছাড়া কিছুই নয়। হানাদারের একথা বোঝা উচিত বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করার অধিকার তার নাই। বাংলাদেশের মানুষ তার মন্তব্যকে বরদাস্ত করতে আজ প্রস্তত নয়। বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান, নির্লজ্জ-উপনির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তার জানা উচিত, বাংলাদেশ থেকে জানে। বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের- এই সত্যকে এহিয়া যদি ভুলতে চাও, বুলেটের তীব্র আঘাতেই ভুল আমরা ভাঙব। হিংসার উন্মত্ততায় দানবিক ইচ্ছাকে চরিতার্থ করার হীনমন্যতায় শোষণের নেশায় বুদ হয়ে এহিয়া খান বাংলার উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। শোষক ভেবেছিল দশ লক্ষ মানুষকে খুন করলেই হয়তো বাংলার গণ-আন্দোলন থেমে যাবে। শেখ মুজিবকে বন্দী করলেই স্বাধীনতার কথা বাঙালীরা ভুলে যাবে। পঞ্চাশ লক্ষ লোককে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দিলেই হয়তো বাংলার গণ-আন্দোলন মোড় হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু এহিয়া, তুমি বাংলাকে চেনো নাই। বাংলাদেশে শুধু গোলাপ, চামেলী, বকুল ফোটে না- এবার দেখো, সেখানে লাল টকটকে রক্তপলাশ ফুটেছে। চবিবশ বছরের সন্তান হারিয়ে মায়েরা শুধু কাঁদতো, এবার দেখো তারা আপন সন্তানের বুকের রক্তে স্বাধীনতার অর্ঘ্য দিতে শিখেছে। বাংলার বুকে শুধু বসন্তের হিল্লোলই বইতোএবার দেখো সেখানে কালবৈশাখী কুজবটিকার ঝড় উঠেছে। তোমাদের কাছে আমরা বার বার মার খেয়েছিএবার দেখো প্রত্যাঘাত হানতে আমরা শিখেছি। তোমাদের ঔদ্ধত্যের জওয়াব আমরা রণাঙ্গনেই দেবো। সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, আবার আমি বলতে চাই- আপনাদের অসুবিধা অনেক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রপ্রধানের চেষ্টার অভাব না থাকা সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব না থাকা সত্ত্বেও, আপনাদের প্রয়োজন মেটাতে তারা পারেন না। কিন্তু এবার আমি বলতে চাই, আজ নেওয়ার দিন নয়- আজ বুকের রক্ত উজাড় করে দিতে হবে। বন্ধুরা আমার, কান পেতে শোন, শহীদের আত্মারা আজও হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। চোখ মেলে চেয়ে দেখো, মায়ের চোখের অশ্রু আজও শুকায় নাই, বোনের দীর্ঘশ্বাসে বাংলার মাটি আজও বিষিয়ে আছে। তাই বন্ধুরা আমার, এগিয়ে চলো, আঘাত হানো, তোমাদের আঘাতে আঘাতে তাদের ক্ষতবিক্ষত করে ফেলো। তোমাদের আত্মত্যাগে বাংলার দিগন্তে স্বাধীনতার সূর্য আলো বিচ্ছুরিত করে তুলুক, মায়ের ঋণ তোমরা পরিশোধ করো।.......