পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

507 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড

  • বাঙালী ধনীদের যে অংশ মুৎসুদী চরিত্রের তারা সময় আপোষকামী। তারা সশস্ত্র শ্রমিক-কৃষক

বুদ্ধিজীবীকে যমের মত ভয় করে। এরা শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। (১০) কোন পণ? আপোষ না সংগ্রাম? পূর্ব বাংলার বিপ্লবের বর্তমান স্তরে “রাজনৈতিক সমাধানের” অর্থ এক পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব বাংলার অবস্থান। এর অর্থ স্বাধীন সার্বভৌম জনগণের গণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা নয়। এর অর্থ পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তির নিকট আত্মসমর্পণ। পূর্ব বাংলার বিপ্লবী জনগণ ও পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এ প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে। (১১) নমনীয় কৌশল বাঙালী ধনী যারা কলকারখানার মালিক, বাঙালী, ব্যবসায়ী, কন্ট্রাক্টর, ধনী কৃষক এবং দেশপ্রেমিক জোতদারদের সম্পদ-বাড়ি গাড়ি ইত্যাদির কোন সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না একটি মাত্র শর্তে যে তারা বিপ্লবের পক্ষে থাকবে। তবে তাদের অধীনে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও বর্গাচাষীকে আগের মত নির্মম শোষণ করতে দেওয়া হবে না। এখানে থাকবে মুক্তিফ্রন্টের কঠোর বিধিনিষেধ। যেসব ধনী, ধনী কৃষক, জোতদার বা যে কেউ শত্রর সঙ্গে সহযোগিতা করবে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। জমি কৃষকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। এ কাজে ব্যাপক কৃষক জনতাকে সক্রিয়ভাবে পক্ষে পেতে হবে, যার উপর বিপ্লবের জয়-পরাজয় নির্ভর করবে। পরিশিষ্ট প্রিয় কমরেডগণ, দীর্ঘ চবিবশ বৎসর পর ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত বিভিন্ন শ্রেণীসমূহের তীব্র শ্রেণীসংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার রাজনীতি অনেকগুলি বিতর্কমূলক বিষয়ের অবসান ঘটিয়ে চলেছে। মূলতঃ সে বিষয়গুলি পূর্ব বাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে ছিল চূড়ান্ত বাধা। যেমন পূর্ব বাংলা “উপনিবেশ” কি না? ঔপনিবেশিক মুক্তির জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজন আছে কি না? বুজো নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম জয়যুক্ত হতে পারে কি না? সংগ্রামের কৌশল কি হবে- সম্মুখ সমর না গেরিলা-পন্থা? শহর থেকে শুরু, না গ্রাম থেকে সূচনা? সর্বোপরি, প্রধান দ্বন্দ্ব কি পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ, না সামন্তবাদ? উপরোক্ত সমস্ত পন্ডিতী বির্তকের অবসান ঘটিয়ে আজ পূর্ব বাংলার বিপ্লব সুনির্দিষ্ট রূপ নিতে চলেছে। বাকী রয়েছে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে শ্রমিকশ্রেণীর ও তার পার্টির নেতৃত্ব বিপ্লবী মুক্তিফ্রন্ট। ইতিমধ্যে এগুলোও দানা বেঁধে উঠেছে। প্রতিটি পার্টিকর্মীর একনিষ্ঠ, ত্যাগ, সাহস, সহনশীলতা ও সংগ্রাম- এগুলো দ্রুত বিকশিত করতে সাহায্য করবে। গত কয়েক মাসের মধ্যে পার্টি কর্মীরা তার প্রমাণও দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে শহীদী মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক নিচুস্তরের কর্মী উচ্চমানের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, অনেক উচ্চস্তরের কর্মী পেছনে হটে যাচ্ছে, দুর্বল জেলা সবল হয়েছে- সবল জেলা দুর্বল হয়েছে। সবচাইতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পার্টি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে ও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লড়াই-এর মাধ্যমে খাঁটি পার্টি গড়ে উঠছে। এর মাধ্যমে আমাদের পার্টি জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা অর্জন করেছে। অতএব, বন্ধুগণ, আজ একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা চলে যে, দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব অবশ্যই সাফল্যমন্ডিত হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জনমত এবং সংগ্রামী “শক্তি” আমাদের পক্ষে। দুনিয়ার মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের সহায়ক। মার্কসবাদ-লেলিনবাদ, কমরেড স্ট্যালিন, মহান নেতা মাও সে তুং, কমরেড হো-চি-মনের চিন্তাধারা ও অভিজ্ঞতা আমাদের পাথেয়। জয় আমাদেরই হবেই। পূর্ব বাংলার “জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব’ জিন্দাবাদ। পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি দীর্ঘজীবি হোক। ১০-৮-৭১ ইং