পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

516 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড শিক্ষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম | বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ পরিষদের সদস্য শাজাহান সিরাজের ভাষণ সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ BANGLADESH CENTRAL STUDENTS’ ACTION COMMITTEE. সদর দপ্তরঃ ঢাকা Head Office DA CCA বাংলাদেশের সাখী ভাইবোনেরা, আজ মহান ১৭ই সেপ্টেম্বর। এ দিনটি বাংলার ছাত্রসমাজ ও গোটা বাঙালী জাতির ঐতিহাসিক ক্রান্তিক্ষণ। এ দিনের গায়ে আমাদের ভাই ওয়াজিউল্লা, বাবুল, গোলাম মোস্তফার বুকের তাজা খুন জড়ানো। আজ থেকে নবছর আগে এমনি সারা বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির অঙ্গনে বিদ্রোহের অগ্নিলাভা জুলে উঠেছিল। লক্ষ হাতের বজ্ৰমুঠিতে জুলে উঠেছিল রক্তরাতুল লাল ঝান্ডা। একদিন মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে পলাশীর আমবাগানে বাংলার স্বাধীনতাসূর্য স্নান হয়ে যায়। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বণিকেরা এ দেশে মনিব সাজে। অফিস-আদালত-রাজপটে, সকল শিক্ষা নিকেতনে ওদের ভাষা, সভ্যতা, সংস্কৃতির দুর্বহ পাথর চেপে বসে। ধীরে ধীরে এই পাথর “অহল্যার অভিশাপে” পরিণত হয়। পঙ্গু করার প্রচেষ্টা বাঙালী জাতির ভাষা, সভ্যতা ও কৃষ্টির সতেজ হৃৎপিন্ডকে। একমাত্র ইংরেজীই রাজভাষায় সমাসীন হয়। সাথে সাথে ফিরিঙ্গি শিক্ষাব্যবস্থা জোঁকের মত চেপে বসে আমাদের অস্তি মাংস হাড়ে হাড়ে। ভারত ভাগ হয়ে তথাকথিত পাকিস্তানের জন্ম হল। জন্মলাভের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে পাঞ্জাবের কলোনী করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু হল। বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করার হীন ষড়যন্ত্রে উপনিবেশবাদী পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী বারবার বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উপর বুলেট, শহীদের অতৃপ্ত আত্মার চিৎকার যায় নাই, যেতে পারে না। প্রতিবছর ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে আমরা প্রভাতফেরী, পুষ্পমাল্য, সভা, শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই মহান দিবস পালন করে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশ আক্রান্ত। পাঞ্জাবী সেনাদের রাইফেল, কামান, মেশিনগান আর মর্টারের আঘাতে বাংলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত, লাখ লাখ শহীদের রক্তে বাংলার পথ প্রান্তর রক্তাক্ত। সারা বাংলাদেশ জুলে -পুড়ে ছারখার। আমরা আজ যুদ্ধে লিপ্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। আর বিদেশে ছাত্র-ছাত্রীযুবকেরা বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আজকের এই মহান সুপ্রভাতে তাই কোন প্রভাতফের নেই, একগুচ্ছো ফুলের পরিবর্তে একমুঠো বুলেট, ফেস্ট্রন-প্ল্যাকার্ডের পরিবর্তে হাতে রাইফেল নিয়ে, মিছিলের পরিবর্তে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা হয়ে ছাত্র-ছাত্রী, ভাই-বোনেরা সারা বাংলার গ্রামগঞ্জে ওয়াজিউল্লা-বাবুল-মোস্তফার হত্যাকারী পাঞ্জাবী হানাদারদের হত্যা করে শহীদদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে মৃতঞ্জয়ী অভিযান চালিয়েছে। অভিযান চালিয়েছে বাংলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে। মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা ভাইয়েরা বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত ধরে শহীদদের নামে শপথ করে, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে আমরা ওয়াদা করেছিলাম যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে পাঞ্জাবীদের হত্যা করে