পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

517 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড মাতৃভূমিকে আমরা মুক্ত করবই। আমরা সে ওয়াদা ভুলে যাই নাই। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে আজ পাক সেনাবাহিনীর ভীতসন্ত্রস্ত। প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে শত শত হানাদার খুন হতে চলেছে। ১৭ই সেপ্টেম্বরের এই মহান দিনের বিপবী অগ্নিলাভার রঙ চোখে-মুখে ছড়িয়ে পাক হানাদার বাহিনীর দসু্যদের খতম করার কাজে আসুন আমরা আরো কঠোর প্রত্যয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ওয়াজিউল্লা-বাবুল-মোস্তফার মত ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির স্বার্থে নিজেদের আত্মোৎসর্গ করি। কৃষক শ্রমিক মেহনতি ভাইয়েরা, পাঞ্জাবী শত্রসেনার বুলেটের আঘাতে আজও আপনারা প্রাণ দিচ্ছেন। রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারে আপনাদের গণজীবন আজও বিপর্যস্ত। আপনাদের এ রক্তদান বৃথা যাবে না। আপনাদের সন্তান আপনাদের সন্তান হয়ে আপনাদের রক্ষা করার জন্য আমরা আজ হাতে অস্ত্র নিয়েছি। একটি পাঞ্জাবীকেও জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে দেব না। রাজাকার বাহিনীতে যারা আছে তাদেরকে কেবল একটি কথাই বলতে চাই তোমরা অনেকেই বাঙালীর সন্তান। বাংলাদেশের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে পাঞ্জাবীদের সাহায্য না করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ কর। অন্যথায় তোমাদেরকেও পাঞ্জাবীদের মত একটি একটি করে হত্যা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা আজ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে হানাদারদের খতম করতে। আপনারা গেরিলাদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা করুন। কারণ তারা আপনাদেরই ভাই, আপনাদেরই বন্ধু। কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সেজে আপনাদের উপর অত্যাচার করছে। তাদের নামের তালিকা নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে পাঠিয়ে দেন। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে, সারা বাংলাদেশকে জুলিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে, হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেও যখন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে খুনী ইয়াহিয়ার কুকর বাহিনী ংলার পথে-ঘাটে খুন হচ্ছে ও পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে, ঠিক সেই মুহুর্তে মাতাল ইয়াহিয়া অভিনব পন্থায় স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন শুরু করেছে। জল্লাদ ইয়াহিয়াকে শেষবারের মত একটি কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- শেখ মুজিবের জীবনের উপর আঘাত আসলে তুমি টিক্কা বাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে যেখানেই যাও না কেন, সেখানেই গিয়ে তোমাদের হত্যা করা হবে। পাঞ্জাবের তখতে তাউসকে ভেঙ্গে খান খান করে ইতিহাস থেকে নাম-নিশানা মুছে ফেলা হবে। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ যখন খুনী ইয়াহিয়ার এই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তখন বিশ্বের বৃহৎশক্তি ও সাম্রাজ্যবাদের দোসর চীন-মার্কিন সরকার জঙ্গীশাহীকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেও কোন ফায়দা না দেখে বাংলাদেশের শত্রু ডঃ মালিককে ক্ষমতায় বসিয়ে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার অভিনব প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে। আমরা সেই সকল শক্তিবর্গকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই হিমালয় পাহাড় ধসে যেতে পারে, বঙ্গোপসাগর শুকিয়ে মরুভূমি হতে পারে, কিন্তু বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে পাঞ্জাবের গোলাম করে রাখা যাবে না। আমরা তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাই না। ভিক্ষা করে স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না। যুদ্ধ করেই আমরা শত্রসেনাদের খতম করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করব। বাংলার ছাত্রসমাজ ও জনগণের পক্ষ থেকে আজকের এই পবিত্র দিনে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা বলতে চাই- বাংলার ভৌগোলিক স্বাধীনতার সাথে সাথে বাংলার কৃষক রাজ কায়েম করব। লক্ষ লক্ষ মানুষের তাজা রক্ত আর ধ্বংসস্তুপের মধ্যদিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তার অর্থনীতি অবশ্যই সমাজতান্ত্রিক হতে হবে। আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যস্থাকে অবশ্যই নির্মুল করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে খান খান করে একটি শ্রেণীশোষণহীন