পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

527 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড স্থাপন করেছিলো- তাদের মত প্রায় ৬৭ জন দালালকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষনার স্পর্ধ। দেখিয়েছে বিশ্বাসঘাতক জালেম। আমরা জানি জালেম প্রায় সব জায়গায় নির্বাচন এড়িয়ে গেছে। কারণ কালবৈশাখীর ঝড়ের প্রচন্ডতায় বিক্ষুদ্ধ বাংলাকে সে চিনেছে। সে জানত নির্বাচনের ঝুঁকি নেওয়ার শক্তি আর দুঃসাহস তার নাই, তবুও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলায় নাক গলিয়ে যে অপরাধ ইয়াহিয়া করেছে তার প্রতিশোধ হিটলারের দোসব আইকম্যানের মৃত্যুদন্ডের মতই নেওয়া হবে। আমরা নিঃসংশয় রণাঙ্গনের বুলেট এ প্রশ্নের উত্তর দেব। .... গণতন্ত্রমনা বাঙালীর হৃদয়ের ঔদার্যকে এরা কাপুরুষতা ভেবেছিল। গত নির্বাচনের পর প্রচন্ড গণবিস্ফোরণের মুখে এদের পিষে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে আমরা পারতাম। ... এদের জন্যে বাংলার আলো-বাতাস-মাটি আজ হারাম। এদের স্পর্শে বাংলার মাটি ডুকরে কেদে ওঠে। এদের দূষিত নিঃশ্বাসে বাংলার বাতাস দূষিত হয়। আজ এদের জন্য কোন মায়া নাই, মমতা নাই, দয়া-দাক্ষিণ্য নাই, ক্ষমা নাই। আজ এদের একমাত্র প্রাপ্য হল মৃত্যু। মোনেম আর মোনেম ঘোষিত এমপিএ আমির হোসেনের পথ ধরেই এদেরকে বাংলার বুক হতে বিদায় নিতে হবে। মাটির বুকেও যদি এরা লুকাতে চায়, মাটি খুঁড়ে এদের বের দালাল যেন এদের পরিণতির দৃষ্টান্ত দেখে শিউরে কেপে ওঠে। সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, যেখানে যখন যে অবস্থায় এদের পাওয়া যাবে, মৃত্যুই এদের পাওনা। এদেরকে করায়-গন্ডায় পাওয়া বুঝিয়ে দিতে হবে। ..... আমাদের ধারণা, ভারতের বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধের পাঁয়তারা করছে, এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য আপনারা প্রস্ত্তত হোন। সংগ্রামী ভাই-বোনেরা আমার, আপনারা নিশ্চয়ই উপলব্দি করেছেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম যতই তীব্রতর হচ্ছে বিশ্ববিবেক, আজ ততই স্পষ্ট আমাদের সপক্ষে। বিশ্বের পথে-প্রান্তরে আজ স্বাধীনতার সপক্ষে অশান্ত মিছিল।... গণতন্ত্রের পাদপীঠ আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত প্রথম হতেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষে কার হৃয়মথিত সহানুভূতি উজার করে দিয়েছে। আমি আনন্দিত রাশিয়াও আমাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সংগ্রামী বাংলা এখন মুক্তির সুতীক্ষ্ম আকাংক্ষায় উদগ্রীব। সারা বাংলা এখর প্রচন্ড শক্তিতে শত্রকে আঘাত হানছে। আর বিশ্ববিবেক যখন চিৎকার কর বলছে বিচারের বাণী নিরবে-নিভৃতে আমরা এই ব্যর্থ প্রয়াসে কেবল মর্মাহতই নই, বিস্ময়াভিভূতও হয়েছি। ... মানবতার আর্তনাদ তাদের কর্ণকুহরে পৌছে না, অসহায় মানুষের আকুতি এদের হৃদয়কে নাড়া দেয় না। বাৎকে বাৎ এরা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু গণতন্ত্রের অমোঘ মন্ত্র এদেরকে আকর্ষণ করে নাই, আর তাই ক্ষমতার সতরঞ্জে এরা ষড়যন্ত্রের গুটি চেলে বাজিমাৎ করতে চান। বিশ্ববিবেকের কণ্ঠস্বর হয়ে দৃঢ়চিত্তে সত্যের প্রতিধ্বনি করার কথা ছিলরাহুচক্রে তিনিও আজ দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন, নইলে সেলসবারীতে ২৫ জন শ্বেতাঙ্গ হত্যা করার জন্যে যখন জাতিসংঘে মানবতা রক্ষা দিবস পালন করা হয়, তখন পৃথিবীর জঘন্যতম নৃশংসতা, জঘন্যতম পাশবিকতা, ১০ লক্ষ মানুষ হত্যার পরও তারা স্পন্দনহীন নির্বিকার থাকেন কেমন করে। ভাবতে আমি অবাক হয়ে যাই বিশ্বের নির্মমতম নৃশংসতার পরও সমঝোতা, কবরের শান্তি আর ধৈয্য ধারণের স্তুতিবাক্য আওড়ান ইতিহাস এদের চক্ষুকে উন্মোচিত করে নাই। এই সব মূক, স্নান, বধির শক্তিবর্গকে আমরা নিঃসংশয়চিত্তে জানিয়ে দিতে চাই, এবার আমরা শেষ সমঝোতার জন্যই বৈঠকে বসেছি, তবে সে বৈঠক আন্তর্জাতিক প্রাসাদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দরবার কক্ষের গোলটেবিলে ঘিরে বসে নাই, বসেছে জননী বাংলার চতুস্পার্শেবর রণাঙ্গনের ট্রেঞ্চে- সে বৈঠকের আলোচনা চালাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সূর্যসেনা মুক্তিবাহিনীর নির্ভীক সেনানীরা। সে বেঠকের ভাষা স্বার্থের রাজনীতির পরিভাষার অনুলিপি নয়- তার ভাষা হল ব্যারেলের অগ্নিবৰ্ষী বুলেট। সে বৈঠকে সমঝোতা বা আপোষ-মীমাংসা হবে না- স্বাধীনতার