পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

528 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড চূড়ান্ত সনদ লিখিত হবে। আর সে সনদ আমরা কলমের কালো কালিতে লিখতে চাই না, লিখব শত্রর বুকের তাজা লাল টকটকে উত্তপ্ত রক্তে। আপনারা শুনে রাখুন, শত্রর রক্ত নিক্তিতে মেপে আমরা পাওনা বুঝে নিতেই বৈঠকে বসেছি। এখানে রাজনৈতিক সওদাগরী ব্যর্থতার বেলাভূমিতে গুমরে মরবে। আজও অসত্যের বুকে বিদীর্ণ করে সত্যের উদ্ভাসিত আলোকরশ্মি যেসব উপনিবেশবাদী শক্তি অবলোকন করতে পারেননি, শোষণ ও অবিচারকে যারা প্রতিবাদ করতে পারেননি, আজও দশ লক্ষ শহীদের আর্তনাদ যারা শোনেননি, সেইসব শক্তির প্রতিভূকে আমি একটিবার জিজ্ঞেস করতে পাই- এই শোষণের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে নিজের দেশ হইতে হিজরত করে আপনাদের জাতির কি জন্ম হয় নি? বৃহৎ শক্তির প্রতিভূ আপনাকে একটি বার জিজ্ঞেস করতে চাই- দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু নয়, একটিবার আপনার সামনে যদি আমার জোয়ান ছেলেকে বুলেটের নির্মম আঘাতে শত্ররা খুন করত, একটিবার আপনার চোখের সামনে আপনার অশীতিপর বৃদ্ধের বুক বেয়নেটের খোঁচায় চৌচির করে দিত, যদি একটিবারের জন্য আপনার চোখের সামনে আপনার মেয়েকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে পাশবিক অত্যাচার করত, যদি আপনার সম্মুখে আপনার গর্ভবতী স্ত্রীর পেট চিরে তার গর্ভজাত সন্তানকে বেয়নেটের খোঁচায় বের করত, যদি আপনার বোনের আপনার ঘর পুড়িয়ে ঘরছাড়া করে জোর করে পরে দেশে পরবাসী করত- তবে আপনি কি প্রতিহিংসার আগুনে জুলে উঠতেন না? আপনি কি ঐ জালেম জল্লাদের কবল হতে মুক্তি চাইতেন না? আপনার স্ত্রী অঝোরে কেঁদে বলত কিনা- ওগো এর প্রতিশোধ চাই। স্বজন হারানো শ্মশানে ওদের চিতা জ্বালাতে আপনি কি একটিবার চাইতেন না? শিশুর মৃত্যুকান্না ভেদ করে সমঝোতার সস্তা স্তুতিবাক্য কি আপনাকে সান্তনা দিতে পারত? নিশ্চপ কেন? উত্তর দিন। আপনি কি পারতেন শত্রর রক্তে না রাঙিয়ে আপনার নিষ্পাপ সতীতুহারা মেয়ের সামনে পিতৃত্বের অধিকার নিয়ে দাঁড়াতে। বৃহৎশক্তির প্রতিভূ আপিনি যদি না পারে না পারেন তবে শক্তিসমূহের কাছে পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই- আমরা আজ কেবল স্বাধীনতার জন্য লড়ছি না, লড়ছি মায়ের অশ্রু, পিতার আর্তনাদ, ভায়ের রক্ত, শিশুরকান্না, বোনের সতীত্ব হননের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য- লড়ছি শত্রর রক্ত নিক্তিতে মেপে সব পাওনা বুঝে নেয়ার জন্য। এ যুদ্ধ সমঝোতার নয়, এ যুদ্ধ স্বাধীনতার। এ অস্ত্র কেবল বুলেটেই নয়, ন্যায় ও সত্যের মহান আদর্শ এর সঞ্জীবনী শক্তি। এর সেনা কেবল রণাঙ্গনে যোদ্ধারাই নয়, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ। আমি জানি, শক্তির দাম্ভিকতা যত প্রচন্ড হোক না কেন তারপরাজয় অবশ্যম্ভাবী। নইলে গত বিশ্বযুদ্ধে হিটলার পরাজিত হত না, মুসোলিনী হার মানত না। কোরিয়া, আলজেরিয়া, কিইবা মুক্ত হতো না। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত আজকের চীন। আজ চীনের যে বিজয় তা পারমাণবিক শক্তির বিজয় নয়, সর্বহারা মানুষের বিজয়। তাই চীন স্বস্তি পরিষদে সর্বহারা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের সমর্থনে এগিয়ে আসবে আমরা আশা করি। ইতিহাস তুমি সাক্ষী রবুে সাড়ে সাত কোটি মানুষর এই ন্যায়, সত্য ও স্বাধীনতার সংগ্রাম ব্যর্থ হবে নাহতে পারে না। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই।