পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

529 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড ংলার কমিউনিষ্ট পার্টি কর্তৃক উপস্থিত বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১ রাষ্ট্ৰীয় রূপরেখা ও কর্মসূচী ংলাদেশের জনগণের সামনে উপস্থাপিত স্বাধীন সার্বভৌম জন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা রূপরেখা ও কর্মসূচী ভমিকা পূর্ব বাংলা পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তি তথা দসু্য হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও লক্ষ লক্ষ নরনারীর জীবন এবং বিনিময়ে আঁর্জত হয়েছে এ মুক্তি। এ মুক্তিসংগ্রামে পূর্ব বাংলার সমগ্র শোষিত মেহনতি মানুষের রয়েছে সক্রিয় অবদান। বিশেষ করে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত মুক্তি ফৌজের সর্বজনস্বীকৃত। বাংলা মায়ের মুক্তিপাগল ঐ সেনানীদের জীবনাহুতি ছাড়া এ সংগ্রাম কিছুতেই সফল হতে পারত না, যদিও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক পশুশক্তিকে পরাজিত করার প্রশ্নে ভারত সরকার ও তার সেনাবাহিনীর ভূমিকাও এখানে জড়িত আছে। তবুও এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলা চলে যে, পূর্ব বাংলার মেহনতি জনগণ ও তার সন্তানদের দ্বারা গঠিত মুক্তিবাহিনীই ছিল এ যুদ্ধের নিয়ামক শক্তি। আগামী দিনেও স্বাধীনসুখী-সমৃদ্ধিশীল সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে এরাই নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। দেশ আজ হানাদার-মুক্ত হলেও শত্রমুক্ত নয়, নয় শোষক ও শোষকহীন। কেননা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের উপর কেবলমাত্র পাকিস্তানী শাসকরাই শোষণ চালায়নি- তাদের সাথে শোষণের শরিকদার ছিল (ক) দেশের অভ্যন্তরের জোতদার মহাজন বা সামন্তবাদী শ্রেণী (খ) বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যদিও এ তিনের মধ্যে প্রধান শত্রুছিল পাকিস্তানী শাসকরা। বাংলার মাটিতে আজ পাকিস্তানী শাসকরা না থাকলেও তাদের বহু কল-কারখানা, ব্যাঙ্ক, ইনসুরেন্স কোম্পানী ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে, রয়ে গেছে মার্কিনসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশের পুঁজি-পাট্টা; তদুপরি জোতদার-মহাজনরা রয়েছে অক্ষত। অতএব ঐসব দেশী-বিদেশী শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শাসন ও শোষণ থেকে জনগণকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে, নতুবা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিঘোষিত শোষকহীন সমাজ হবে অর্থহীন। গত নয় মাসের ঘটনাবলী কি প্রমান করে? প্রমাণ করে দেশের অভ্যন্তরের জোতদার-মহাজন ও তাদের দালালরাই ছিল পাকিস্তানী শাসকদের মূল খুঁটি; এদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পূর্ব বাংলার অসংখ্য গ্রামে সংঘটিত হয়েছে অগণিত ‘মাইলাই’ (ভিয়েতনাম) হত্যাকান্ড। আজো শেষ হয়নি দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের ষড়যন্ত্র, ভাঙ্গেনি তাদের শোষণের বিষদাত। তাছাড়া অর্থনৈতিক ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন, তা পূর্ব বাংলার জনগণ গত চবিবশ বছর ধরে হাড়ে হাড়ে উপলব্দি করেছে, উপলব্দি করেছে বলেই বাংলার সাধারণ মানুষ সর্বাগ্রে স্বাধীনতার দাবী তুলেছে, সকলের আগে ধারণ করেছে অস্ত্র। এ জনগণই গত নয় মাসে সবচাইতে বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাই এ জনগণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে। শুধু মুখের কথায় জনগণের মুখে হাসি ফুটবে ১৯৭১ সালের ৩০ ও ৩১ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পার্টির কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক দলিলের ভিত্তিতে রচিত।