পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

531 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড (২) রাষ্ট্র হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম। আনুপাতিক ভোটগ্ধ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ তাদের শ্রেণীভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচন করে পার্লামেন্ট গঠন করবে এবং এ পার্লামেন্ট হবে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কার্যকরী করার সর্বোচ্চ শক্তিশালী হাতিয়ার। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের প্রতিটি নর-নারীর ভোটাধিকার থাকবে। (৩) সকলের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এবং বৃদ্ধকালীন ভাতা প্রদান করার নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) সম্মুখে রেখে সমস্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকরী করা হবে। (৪) বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল জাতি, উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান রাষ্ট্ৰীয় ও সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। (৫) এ রাষ্ট্র দেশের মধ্যে সকল রকমের দুনীতি, স্বজনপ্রীতি, চুরি-ডাকতি-রাহাজানি, ভিক্ষাবৃত্তি, উগ্র আঞ্চলিকতা প্রভৃতি যেসব সামাজিক অনাচার ও শোষণ-নিপীড়ন মানুষকে যুগ যুগ ধরে পঙ্গু করে এসেছিল- তার পরিপূর্ণ উচ্ছেদ করবে। উপরোক্ত মূলনীতি সামনে রেখেই বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি জন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিন্মোক্ত কর্মসূচী ১। কৃষক ও কৃষি সমস্যার ক্ষেত্রে (ক) বাংলাদেশের আধাসামন্তবাদী ব্যবস্থার অবশেষকে সম্পূর্ণভাবে উৎখাত করা হবে। "যে চাষ করে জমি তার” এ নীতির ভিত্তিতে কৃষিব্যবস্থার পুনর্গঠন করা হবে। জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবে তিন শত্রর এবং তাদের দালালদের সমস্ত বাজেয়াপ্ত জমি ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্ষেতমজুর, বর্গাচাষী ও গরীব কৃষকদের মধ্যে প্রয়োজনের অনুপাতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। (খ) বিপ্লবের মিত্র শিবিরে অনেক অকৃষক জমির মালিক আছে বা থাকবে যারা কৃষির আয়ের দ্বারা স্বাচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না বলে অন্য পেশা গ্রহণ করেছে- কৃষক হিসাবে এদের ভূমিকা নেই। এদের জমি উচিত মূল্যে সরকারী খরচে ক্রয় করে বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিলি করা হবে। কিন্তু এদের জমি তখনই নেওয়া হবে যখন এরা নিজ নিজ পেশার আয়ের দ্বারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে, তার আগে নয়। (গ) অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান এর মৌলিক প্রশ্নে অসহায় বিধবা ও অন্যান্য অকৃষক মানুষদের হাতে জীবনধারণের মূল উপকরণ হিসেবে যে জমি আছে তা উচিত মূল্যে সরকারী খরচে ক্রয় করে নেওয়া হবে ও বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিলি করা হবে। তবে তা করা হবে ঐ সকল মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, রাষ্ট্র কর্তৃক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর, তার আগে নয়। (ঘ) আবাদযোগ্য পতিত জমি ও সরকারী খাস জমিসমূহ কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। ওয়াকফ, দেবোত্তর সম্পত্তির নামে যুগ যুগ ধরে কৃষকদেরকে শোষণ করা হচ্ছে তাকে বিলুপ্ত করা হবে। কিন্তু ধর্মীয় ও সৎ উদ্দেশ্যে যে ওয়াকফ বা দেবোত্তর করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্যে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (ঙ) উন্নত ধরনের বীজ, সার ও বৈজ্ঞানিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, কৃষিতে সেচসহ উন্নত বৈজ্ঞানিক খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।

  • আনুপাতিক ভোট বলতে বুঝায়ঃ- নির্বাচনে ব্যক্তি প্রার্থী না হয়ে পার্টি প্রার্থী হবে। জনগণ পার্টিগুলোকে ভোট দেবে। যে পার্টি সারা দেশে যত বেশী ভোট পাবে তা একত্র করে সম্পূর্ণ প্রদত্ত ভোটের অনুপাতে পার্লামেন্ট ঐ পার্টির প্রতিনিধির সংখ্যা নির্দিষ্ট হবে। তারপর ঐ পার্টি ব্যক্তি নির্দিষ্ট করে দেবে (অর্থাৎ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি মনোনিত করে পাঠাবে)। এ অবস্থায় কোন ভোটারের ভোট অপ্রতিনিধিত্বমূলক থাকে না।