পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

538 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড পলায়ন করিতেছে। বাংলাদেশের বহু অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে এবং আশা করা যায়, শীঘ্রই বাংলাদেশ পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করিবে। আমরা আজ স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হইয়াছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এবং পার্টি কর্মীরা যে যেখানে আছেন, উক্ত মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করিয়া কাজ করিবেন যাহাতে পাকবাহিনী তাড়াতাড়ি বিধ্বস্ত হইয়া আমাদের বিজয় তুরান্বিত হয়। ইহা আমাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে যে, যদিও ভারতীয় সৈন্যবাহিনী একটি বিদেশী রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনী, তবুও এই বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সাহায্যে আগাইয়া আসিয়াছেন এবং পাকবাহিনীর সহিত সম্মুখরণে রক্তও ঢালিতেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থেই এই বাহিনীকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য এবং এই কাজে জনগণকে উৎসাহিত করিতে হইবে। ভারতীয় বাহিনীর প্রতি আমাদের দেশবাসীর বন্ধুত্বমূলক ও ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ আমাদের দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ও মৈত্রী ঘনিষ্ঠতর করিয়া আমাদের দেশের উপর প্রতিক্রিয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের হস্তক্ষেপের পথ রুদ্ধ করিতে সাহায্য করিবে। অতুলনীয়। ২ শে মার্চ তারিখে বাংলাদেশে ইয়াহিয়া-চক্রের গণহত্যা প্রভৃতি শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই দুনিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির ভিতর একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদগনি গণহত্যার তীব্র নিন্দা করেন এবং সে নির্যাতন বন্ধ, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি, তাঁহার হাতে ক্ষমতা অর্পণ ও বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে একটা সন্তোষজনক রাজনৈতিক মীমাংসা করার জন্য ইয়াহিয়া খানকে অনুরোধ করেন। তখন হইতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশ সম্পর্কে ঐ সমর্থন সূচক নীতি দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করিয়াছে। এই নীতির ভিত্তিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে নিজ দেশের জনগণকে সমাবেশ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে দুনিয়াতে একটা প্রবল জনমতও সৃষ্টি করিয়াছেন। ইয়াহিয়া খান যখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিতেছিল তখনই সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই মুক্তি সারা এশিয়াতে শান্তির একটা দৃঢ় রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করিতেছে। উপরন্তু, ইহার ফলে ও বাংলাদেশ প্রশ্নে সোভিয়তের সমর্থনের নীতি হেতু ভারত সরকারও ইয়াহিয়া সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করিতে আরও অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হইয়াছেন। সম্প্রতি, পাক-ভারত যুদ্ধ বাধিবার পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ও চীনের মাওবাদী নেতৃত্ব ইয়াহিয়ার পাশে দাঁড়াইয়া নিরাপত্তা পরিষদের মারফত বাংলাদেশ ও এই উপমহাদেশে হস্তক্ষেপ করার চক্রান্ত করে। ইহাতে আমাদের মুক্তির সংগ্রামের সামনে একটি সংকট উপস্থিত হয়। সেই সংকট সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নই নিরাপত্তা পরিষদে তাহার ভেটাে প্রয়োগ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীনের মাওবাদী নেতৃত্বের চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দেয় এবং আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সাফল্যে বিরাট অবদান রাখে। বস্তত্ততঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমাবধি ইয়াহিয়া-চক্রের বর্বর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াইয়াছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে প্রভূত সাহায্য করিয়াছে ও করিতেছে। দুনিয়ার নিপীড়িত জাতি সমূহ ও জনগণের ন্যায্য অধিকারের সংগ্রামকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার যে নীতি সোভিয়েত ইউনিয়ন বরাবরই অনুসরণ করিয়াছে, সেই প্রলেতারীয় আন্তর্জাতিকভাবে নীতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকিয়াই সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াইয়াছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু। সোভিয়েতের সাহায্য ও সমর্থনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি।