পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

539 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নাই কিন্তু আমাদিগকে আত্মসন্তুষ্ট থাকিলে চলিবে না। সাম্রাজ্যবাদীরা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের উপর তাহদের কজি শিথিল হইয়া যাওয়ার আশঙ্কায় উন্মাদের মত আচরণ করিতেছে। ইয়াহিয়া-চক্রের ব্যাপক নরহত্যা এবং নানা পাশবিক অত্যাচারের কথা বেমালুম চাপিয়া গিয়া সাম্রাজ্যবাদীরা এখন ভারতকেই আক্রমণকারী বলিয়া অভিহিত করিতেছে এবং বশংবদ ইয়াহিয়া সরকারকে টিকাইয়া রাখার জন্য পথ খুজিতেছে। এ জন্য তাহারা সম্ভবপর হইলে যে কোন ঘৃণ্য পদ্ধতি গ্রহণ করিতে পারে, এমন কি খোলাখুলি হস্তক্ষেপ করিতেও দ্বিধা না করিতে পারে। অন্যদিকে চীনের নেতৃত্ব মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পথ হইতে বিচ্যুত হইয়া এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং সুবিধাবাদী নীতি অনুসরণ করিয়া প্রতিক্রিয়াশীল ইয়াহিয়া সরকারকে নিলজ্জভাবে সমর্থন জানাইতেছে, বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে এবং ভারত সরকারকে আক্রমণকারী আ্যখ্যা দিয়া নানা প্রকার হুমকি দিতেছে। জাতিসংঘ চীন-বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সকল চক্রান্তের প্রতি সমর্থন দিতেছে। তাই, এইরূপ একটি আশঙ্কাও দেখা দিয়াছে যে, অন্ধ সোভিয়েত বিরোধিতা হইতে চীন- মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সহিত সোভিয়েত বিরোধী তথা সমাজতন্ত্রবিরোধী চক্রান্তে শামিল হইয়া চীন-সোভিয়েত সংঘর্ষ সৃষ্টি করিতে পারে। এমন আশঙ্কা আছে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের ও চীনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ হইলে বাংলাদেশ প্রশ্নকে ভিত্তি করিয়া বাংলাদেশের বুকে এমন কি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এক প্রলংকরী যুদ্ধের সৃষ্টি হইতে পারে এবং আমাদের মুক্ত সংগ্রাম ব্যাহত হইতে পারে। আমাদিগকে এই বিপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ থাকিতে হইবে এবং সকল প্রকার অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে। সাম্রাজ্যবাদীদের ও চীনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত সৃষ্টি করিতে হইবে এবং মুক্তিবাহিনী ও সাফল্যের পথে মুক্তিযুদ্ধ যদি বাহিরের কোন হস্তক্ষেপ না হয়, তবে বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে, যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দ্রুত সাফল্য অর্জন করিতে পারে। এই সম্ভাবনার দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই আমাদের পার্টির বর্তমান করণীয়গুলি স্থির করিতে হইবে। করণীয়ঃ (১) আজ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। ইহা উপলব্ধি করিয়া মুক্তিবাহিনী ও গেরিলা বাহিনীতে আমাদের কর্মী ও সমর্থকগণ সুদৃঢ় সক্রিয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করুন, যাহাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপূর্ণ বিজয় ত্বরান্বিত হয়। বলাবাহুল্য যে, আমাদের কর্মী ও সমর্থকগণ সুদৃঢ় সক্রিয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করুন, যাহাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপূর্ণ বিজয় তুরান্বিব হয়। বলাবাহুল্য যে, আমাদের কর্মী ও সমর্থকগণ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সাধারণ কার্যক্রম মানিয়া নিয়া তাহদের সঙ্গে সহযোগিতা করিয়া সংগ্রাম পরিচালনা করিবেন। (২) মুক্তিযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় তুরান্বিত করা ও অন্যান্য কর্তব্য সম্পর্কে আজ দেশবাসীকে সচেতন, সংগঠিত এবং সক্রিয় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কাজ হিসাবে দেখা দিয়াছে। আমাদের সমর্থনে জনগণকে সক্রিয় করিয়া তুলিতে চেষ্টা করা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যাহাতে জনগণ পরিপূর্ণ সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করে তাহার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করিতে হইবে। যে সমস্ত পার্টি সভ্য ও কর্মী প্রবাসে চলিয়া যাইতে বাধ্য হইয়াছেন, তাহারাও অবিলম্বে স্ব স্ব জেলা কমিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরে নিজ নিজ অঞ্চলে ফিরিয়া আসিতে শুরু করিবেন এবং সেখানে গিয়া উপরোক্ত কাজগুলি শুরু করিয়া দিবেন।