পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

540 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড (৩) মুক্তিযুদ্ধকে দ্রুত সাফল্যমন্ডিত করা ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলদেশকে একটি পরিপূর্ণ স্বাধীন, সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তোলার জন্য পার্টিও সমস্ত সদস্য, কর্মী ও সমর্থকগণ প্রতিনিয়ত জনতার স্বার্থে কাজ করিয়া যাইবেন এবং পার্টির নীতি ও কমসূচী জনগণের মধ্যে অবিরত প্রচার করিবেন। (৪) যেসব অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে বা হইতেছে সেসব অঞ্চলের গ্রামে, ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দলমতের প্রতিনিধিদের লইয়া সর্বদলীয় গণকমিটি (People's committee) গঠন করার চেষ্টা করিতে হইবে। এই কমিটির উপরেই সেই অঞ্চলের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব যাহাতে দেওয়া হয়, সে জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। (৫) প্রতিটি মুক্ত অঞ্চল অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হইল আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা। ইহা করতেই হইবে। জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে সমস্ত জনসাধারনের নিরাপত্তা বিধান করিতে হইবে। অবাঙ্গালীবিরোধী বা কোন প্রকার দাঙ্গা-হাঙ্গামা যাহাতে না হয় তার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে। (৬) মুক্ত এলাকায় খাদ্য ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির সুষ্ঠ বিতরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করিতে হইবে। জনগণের উপর কোন জীবনযাত্রা ফিরাইয়া আনার চেষ্টা করিতে হইবে। মুক্তিযুদ্ধ সাফল্যমন্ডিত হওয়ার পরপরই আমাদিগকে নানা ধরনের গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হইতে হইবে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী পুনর্বাসনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা করা, যুদ্ধবিধ্বস্ত ভাঙ্গাচোরা অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করা, ভবিষ্যতে দেশকে গড়িয়া তোলার জন্য এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করার কাজ আমাদের সামনে উপস্থিত হইতেছে। জনতার পরিপূর্ণ আস্থা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া উক্ত বিরাট কাজ সুসম্পন্ন করা সম্ভবপর নয়। এই জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দল ও প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধকে জোরদার করা ও সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার জন্য আমরা প্রথম হইতেই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব করিয়াছি। বর্তমান জটিল ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং দেশের পুনর্গঠনের কাজ সুচারুরূপে অগ্রসর করার জন্য ঐরুপ ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাইয়াছে। কোন দলকে ছোট মনে করা তাহার প্রভাবকে ক্ষুন্ন করার জন্য নয়, দেশবাসীকে সুদৃঢ় ঐক্য গঠনের জন্য ইহা একান্ত প্রয়োজন। এইরূপ ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট দেশ পুনর্গঠনের উপযোগী একটা কার্যক্রম গ্রহণ করিয়া উহা কার্যকরী করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করিতে পারে। এই কার্যক্রমের মূল কথা হইবে- দেশকে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবমুক্ত করিয়া একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। উক্ত কার্যক্রমের মূল বিষয় হইবে- কৃষি জমির সিলিং নির্ধারণ করিয়া খোদ কৃষকের হাতে জমি বিতরণ; শ্রমিকদের বাঁচার মত নিম্নতম মুজরি নির্ধারণ; চাকুরীর নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিতকরণ; ব্যাঙ্ক-বীমা, বড় বড় শিল্প, পাট ও আমদানী-রপ্তানী ব্যবসা প্রভৃতি জাতীয়করণ; ছোট ও মাঝারি শিল্পপতিদের জাতীয় শিল্প গড়িয়া তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহ দান; সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাহায্যে শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প গড়িয়া তোলা; সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে বন্ধুত্বমূলক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়িয়া তোলা; স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ; সাম্রাজ্যবাদীদের শর্তযুক্ত সাহায্য বর্জন এবং সমাজতান্ত্রিক ও নিরপেক্ষ দেশগুলির সহিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা।