পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৬৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

667 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড QUAMRUL HASSAN C/O, Mo, Khaled choudhury 2/1 A Nort Range Calcutta-17 28-9–71 প্রিয় এনামুল, বহু তত্ত্ব-তল্লাশির পর তোমার ঠিকানা পেলাম আশা করেছিলাম তোমার কাছ থেকেই আগে চিঠি পাব। আমি কলকাতায় এসেছি গত এপ্রিল মাসের তারিখে। সেই থেকেই তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। যাই হোক, বহু কথা জমা হয়ে আছে। এখানকার এই পরিবেশে সেসব চিন্তায় কোন বাস্তব রূপ দিতে পারব বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের সভ্যদের মানসিকতা তো জানই। তবুও ধৈর্য ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবেও নিশ্চিন্তে নাই, কারণ আমি একলাই কলকাতায় এসেছি। তোমার ভাবী এবং রত্না এখনও ঢাকাতেই আছে। এই ছয়মাসের মধ্যে মাত্র দুবার যোগাযোগ রক্ষা করতে পেরেছি। বিশেষ অবস্থায় পড়েই তোমার ভাবী এখনও ঢাকায় পড়ে আছে। কখন যে কোন বিপদ আসে সেই চিন্তাতে মাঝে মাঝে খুবই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। গতমাসে আলভী (শিল্পী) ঢাকায় গিয়েছিল কিন্তু সে আর সংবাদ নিয়ে ফিরে আসতে পারল না। সে ধরা পড়ে গেছে পাক সেনাদের হাতে। অবশ্য ঢাকায় পৌছানোর কয়েকদিন পরে। আলতাফ মাহমুদ এর বাড়ী থেকে। আলতাফ মাহমুদ ধরা পড়েছে আগেই এবং ওর উপর অনুমানুষিক অত্যাচার হয়েছে সংবাদ পেয়েছি। তাকে বোধ হয় জীবিত অবস্থায় আমরা দেখতে পাবো না। জানি না তুমি এ সংবাদ পেয়েছে কিনা। যাক এরকম নংবাদের তো শেষ নাই। এবার আমাদের কথা বলি। এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের শিল্পীরা Painting Exhibition করেছিলাম। নতুন, দেবদাস, স্বপন চৌধুরী, মুস্তফা মনোয়ার, কাজী গিয়াস এবং আরও অনেকে-প্রায় কুড়িজন কলকতায় আছে। নানান অসুবিধার মধ্যে সকলকে ছবি আঁকতে হয়েছে। মোটামুটি প্রদর্শনী ভালই হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের প্রচার দফতরের পক্ষ থেকে আরও কাজ করছি। Poster আকছি। কিন্তু আমি যেভাবে কাজ করতে চাই তা এই পরিবেশে সম্ভব নয়। তোমাদের মাঝখানে যেতে পারলে খুব ভাল হত। অনেকেই তো গেল বিদেশে। শিল্পীদের মধ্যে কেউই যায়নি অথচ Painting এর মধ্যে অনেক কিছু করার আছে। তাছাড়া London এর মত জায়গায় গেলে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ সুযোগ পাওয়া যাবে ফলে Painting এবং Poster সবই করা সম্ভব। প্রচুর কাজ করার রয়েছে। আমার মনে হয় তুমি আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেবের সাথে আলোচনা করে আমকে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করতে পারো। তোমাদের কাছে এাকবার যেতে পারলে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবো। তোমাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত কিছুই জানি না। আমার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই তোমাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ জানিও।


রোজী (আমাদের মেয়ে) সুইজারল্যান্ডে আছে। ......করাচী থেকে ওকে পালাতে হয়েছে।

এখানে আসার পর আমেরিকা থেকে নেনুর চিঠি পেয়েছিলাম। সে কিছু একটা করতে চায় আমাকে নিয়ে গিয়ে। কিন্তু আমি প্রথমে তোমাদের কাছে যেতে চাই। তোমরা বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে আমাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলেই সুবিধা হবে বলে আমার মনে হয়, আমি বাংলাদেশ সরকারের সাথেই সংযুক্ত। তুমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নিও। উত্তরের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকবো। ইতি কামরূল ভাই