পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/১০০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

968 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড ভারতীয় সৈন্যদের একটি দল ঢাকা নগরীর ১১ কিলোমিটারের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছেন। আর একটি মাত্র নদী অতিক্রম করলেই তারা শহরের অভ্যন্তরে যেয়ে পৌছবেন। আজ দুপুরের দিকে একটি পাক পরিবহন বিমান থেকে পুস্তিকা ফেলে বলা হয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা যে সব অবাংগালীদের হাতে অস্ত্র দিয়েছে তারা যেন নিজ নিজ এলাকা থেকে দ্রুত সরে যায়। প্রকাশ, বাঙ্গালী পুলিশের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে, এই সম্ভাবনায় পাক কর্তৃপক্ষ তাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে পাক সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ অসামরিক অফিসারার পদত্যাগ করেছেন বলে নয়াদিল্লীর এক সরকারী মুখপাত্র জানিয়েছেন। মুখপাত্র বলেন, সরকারের কাছে খবর এসেছে যে, এই অফিসাররা ঢাকার রেডক্রসের নিরপেক্ষ অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সংখ্যা প্রায় ৬৫ জন। এই সংবাদটি ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধি মিঃ রেনার্ড জেনিভায় রেডক্রসকে পাঠিয়েছেন। ভারতীয় রেডক্রস আজ বেলা আড়াইটায় সংবাদটি পান। রেনার্ডের বার্তায় ছিলঃ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সর্বোচ্চ শ্রেণীর অফিসাররা পদত্যাগ করছেন এবং রেডক্রসের নিরপেক্ষ এলাকায় আশ্রয় চেয়েছেন। অবিলম্বে ভারতীয় ও বাংলাদেশ সরকারকে খবরটি জানান। আমরা এখানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হয়নি। ভারত সরকার নয়াদিল্লীর আন্তর্জাতিক রেডক্রস প্রতিনিধির উপরোক্ত অনুরোধে সম্মত হয়ে ঢাকার হোলিফ্যামিলি হাসপাতাল এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলকে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া ভারত বর্ষের মধ্যে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটিকে কাজ করবার সুযোগ ভারত সরকার দিয়েছেন। মুখপাত্র আরো বলেন, নিরপেক্ষ এলাকা এবং ঢাকা সম্পর্কে ভারত সরকার জেনিভা চুক্তি অনুসরণ করছেন। এর অর্থ হচ্ছে আহত এবং অসুস্থ সৈন্য এবং অসামরিক নাগরিকদের আশ্রয়দান, রাষ্ট্রসংঘ এবং বিদেশীদের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কও এই মর্মে ভারতীয় কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মুখপাত্র বলেন, ব্যবস্থাগুলি কার্যকরী করতে হলে ঢাকার পাক দখলদার বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁরা যেন নিরপেক্ষ এলাকা সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার না করেন। পিটিআই ইউএনআই। ঢাকা থেকে রয়টারের অপর এক খবরে জানা যায় যে, পূর্ববঙ্গে অসামরিক সরকারের সমস্ত কাজকারবার সব বন্ধ হয়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল মিঃ এম এ চৌধুরীসহ প্রায় ১৬ জন পদস্থ সিনিয়র অসামরিক অফিসার আজ সকালে এখানে রেডক্রসের নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত ইন্টারকন্টিনেন্টালে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ‘গভর্ণর মিঃ এ এম মালিকের বর্তমান মতলব জানা যায়নি। যারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা মিঃ মালিকের লিখিত আদেশেই তা করেছেন। মিঃ মালিক তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা, যেন কাজকর্ম বন্ধ করে নিরপেক্ষ এলাকায় পালিয়ে যান। খুলনাকে সবদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পাক সেনাবাহিনী সেখানে শেষ যুদ্ধ লড়ে চলেছে। রংপুর সেক্টরে এদিন আরো যে কয়েকিট শহর ও অঞ্চল দখল করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে খেতলাল, জয়পুর হাট ও খানসামা।