পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

688 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড ২৬২ | ক্ষমাহীন অপরাধ (সম্পাদকীয়) কম্পাস ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ ক্ষমাহীন অপরাধ সমস্ত ভারত আজ “বাংলাদেশ” বা পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে অভূতপূর্ব এক উদ্বেগের মধ্যে প্রকৃত সংবাদের জন্য উদগ্রীব। যে সয়তানী চক্রান্ত করে পূর্ববঙ্গের নেতাদের উপর ও জনসাধারণের উপর এত অতর্কিত পৈশাচিক আক্রমণ করা হয়েছিল, তার পরিণামে কত যে নিরস্ত্র নিরীহ জনসাধারণের প্রাণ গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। রাজধানী ঢাকা যে একটি শাশানে পরিণত হয়েছে এ সংবাদ আজ চারিদিক থেকে বেরিয়ে আসছে। এত বড় ঐতিহাসিক হত্যাকান্ডকে চাপা দেওয়া সম্ভব হবে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোহর প্রভৃতি শহর গুলিতে এত মড়া এখনও রাস্তায় পড়ে আছে যা এখনও সরানো সম্ভব হয়নি, সরাবার লোকও নেই। ৫/৬ লক্ষ লোককে হয়তো হত্যা করা হয়েছে। কোন বড় আকারের যুদ্ধেও এত লোক মরে না- মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এত বড় হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। পূর্ববঙ্গের নবজাগ্রত যুবশক্তির একটা বিরাট অংশকে ওরা হয়তো শেষ করে দিয়েছে। এতদসত্ত্বেও জল্লাদ ইয়াহিয়া খান ব্যর্থ হয়েছে। এই পাষন্ড জেনারেলটি মনে করছিল যে ২/৩ দিনের এক প্রচন্ড আঘাতেই পূর্ববঙ্গের মেরুদন্ড একেবারে ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হবে, এবং সেই প্রচন্ড অতর্কিত আক্রমণের প্ল্যান করার ব্যবস্থা করে। হয়তো এমনও হতে পারে নবনির্বাচিত সদস্যদের বেশীর ভাগকেই ঐ ২৫শের রাত্রিতেই ধরে ফেলে এবং হয়তো হত্যাও করে ফেলে। রাত্রির অন্ধকারেই ইউনিভার্সিটি আক্রমণ করে প্রতিটি হলের ঘুমন্ত ছেলেদের নির্বিচারে গুলী করে এবং অধ্যাপকেরাও রেহাই পান না- আর গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুণ ধরিয়ে দেয়। তারপরে কত কি পৈশাচিক কান্ড করে সমস্ত শহরের উপর, পর পর কয়েক দিন ও রাত্রি ধরে তার বীভৎস বিবরণ ক্রমশ প্রকাশ হবে। এতদসত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান ব্যর্থ হয়েছে। ২/৩ দিন তো দূরের কথা ২ সপ্তাহ পার হতে চললো, পূর্ব বাংলার নরনারীদের মেরুদন্ড ভগ্ন করা সম্ভব হয়নি, তাদের প্রাণে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। শহরগুলির উপরও সর্বত্র তাদের জুলুমী রাজ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি, ক্যান্টনমেন্ট গুলিই তাদের হাতে- শহরগুলি হয় এখনও জনতার হাতে, নয়তো পরিত্যক্ত- উভয়পক্ষ থেকেই দিনাজপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া প্রভৃতি শহরগুলির উপর বোমারু বিমান থেকে বোমা ফেলাতে শত্রপক্ষের শক্তির পরিচয় প্রকাশ পায় না, উক্ত শহরগুলি যে তাদের এখনও হাতছাড়া, এবং ধ্বংস করা ছাড়া তাদের প্রতিরোধ শক্তি নষ্ট করা সম্ভব নয়, এতে তারই প্রমাণ হয় মাত্র। জনসাধারণ যদি আর একটুও এই প্রতিরোধ বজায় রাখতে পারে, তবে এই যুদ্ধ শীঘ্রই একটা অচলাবস্থা বা Statemate- এ পরিণত হবে। জনসাধারণের পক্ষেও কিছু ভুল ধারণা হয়তো ছিলো, তারাও হয়তো মনে করেছিলেন যে একমাত্র জনসমুদ্রের সাহায্যেই ইয়াহিয়া বাহিনীর ঘাঁটিগুলিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন- ২/১ সপ্তাহের মধ্যেই। তাঁরা লক্ষে লক্ষে প্রাণ দিতেও তাই কসুর করেননি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রবলভাবে সজ্জিত আধুনিক এক বেপরোয়া নির্মম শত্রু পক্ষকে একমাত্র human-wave বা জন সমুদ্রে ঢেউ দিয়েই ভাসিয়ে দেওয়া যায় না, প্রত্যক্ষভাবে শত্রর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এ সংগ্রামে জয় অর্জন করা সহজ নয়। জনসাধারণ তাই গ্রামদেশে ও নদীনালা জঙ্গল পর্বতের উপরই ক্রমশ নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে। ২/১ সপ্তাহের সংগ্রাম এ নয়, ২/১ বৎসরের সংগ্রামের জন্যই তাঁদের প্রস্তুত হতে হবে, এই জ্ঞান অভিজ্ঞতা থেকেই সঞ্চিত হচ্ছে। যদি এই সংগ্রামকে দীর্ঘায়ত করা যায়,