পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

71 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ২৭৪৷ পাকিস্তানের ভরাডুবি (সম্পাদকীয়) আনন্দবাজার পত্রিকা ২১ এপ্রিল, ১৯৭১ পাকিস্তানের ভরাডুবি দুবুদ্ধির বশে বাংলাদেশের উপর হিংস্র আক্রমণ চালাইয়া ইয়াহিয়া বাঙালীদের গোর দেওয়ার জন্য যে কবর খুঁড়িয়াছিলেন তাহাতে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকেই না মাটি দিতে হয়। তাহার অঙ্গচ্ছেদ তো ইতিমধ্যেই হইয়া গিয়াছে। জঙ্গীশাহী হাজার চেষ্টা করিলেও সে কাটা শরীর আর জোড়া লাগাইতে পরিবে না। কিন্তু যে অংশটুকু তাহার একান্ত নিজস্ব সেটুকুও যে ফৌজী দাওয়াই প্রয়োগ করিয়া বাঁচাইয়া রাখিতে পারিব, এমন ভরসাও কম। রক্ত শুধু পূর্বেই ঝরে নাই, ঝরিয়াছে পশ্চিমেও। আসলে অবশ্য সে রক্ত পূর্বেরই, নিজের দেহে তাহা সঞ্চারিত করিয়াই পশ্চিম শক্তি সঞ্চয় করিয়াছে। নিয়তির এমনই পরিহাস, পূর্ববঙ্গের বুক চিরিয়া যে রক্ত পান করিয়া পশ্চিম-পাকিস্তানের এত তেজ সেই আর্থিক রক্তই তাহাকে ঢালিতে হইতেছে বাংলাদেশকে শায়েস্তা করিবার জন্য। অপর্যাপ্ত রক্তক্ষয় এখন তাহাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলিয়া দিতেছে। পাকিস্তানের সমৃদ্ধির শুধু নয়, প্রাণের উৎসও পূর্বে পূর্ববঙ্গের পাট ও চা বেচিয়া যে বৈদেশিক মুদ্রা সে উপার্জন করিয়াছে, সেটা ভোগে লাগিয়াছে পশ্চিমের পূর্বাঞ্চলকে দেখাইয়া বৈষয়িক সাহায্য আদায় করিয়া কাজে লাগাইয়াছে পশ্চিম এলাকার। বাংলাদেশে নরমেধযজ্ঞের উপচার সংগ্ৰহ করিতে বাঙালীদেরই রক্ত-জল-করা পাট-চা বেচার টাকা লাগানো হইতেছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণ সে যজ্ঞে আহুতি দেওয়া হইয়াছে বটে, কিন্তু খোদ পাকিস্তানই তো মরিতে বসিয়াছে। ইয়াহিয়া খাঁর তহবিলে এত অর্থ নাই যে তিনি প্রত্যহ এক কোটি টাকা খরচ করিয়া তাঁহার নিষ্ঠুর খেয়াল চরিতার্থ করেন। এক তো তাঁহাকে সঞ্চিত অর্থে হাত দিতে হইতেছে, তাহার উপর ক্ষয়ক্ষতি পূরণের উপায়ও তো তাঁহার নাই। যে রাজহাঁস সোনার ডিম পাড়িত তাহাকেই তো প্রায় শেষ করিয়া আনিয়াছেন। আর পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে সে হাঁস তো মরারই শামিল-বাঁচিয়া থাকিতে সোনার ডিম তো আর সে পশ্চিম-পাকিস্তানের হাতে তুলিয়া দিবে না। ইয়াহিয়া খাঁ যখন চোরের মতো রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়া ঢাকা ছাড়িয়া পলাইয়া যান তখন পাকিস্তানের তহবিলে মজুত বিদেশী মুদ্রা ছিল মাত্র ৮ কোটি ২০ লক্ষ ডলার। এই কয় দিনেই তাহার মধ্যে দুই কোটি ডলারের উপর পদ্মার জল ঢালিয়াছে জঙ্গীশাহী। তবুও সে হালে পানি পাইতেছে না। সেন্টোর বন্ধুরা কিঞ্চিৎ অস্ত্রশস্ত্র অবশ্য যোগাইয়াছে, কিন্তু তাহতে কতদিন চলিবে? বসিয়া খাইলে কুবেরের ভান্ডারও শূন্য হইয়া যায়-পাকিস্তানের পুঁজি তো সামান্য। নগদ টাকার অভাবে ধার যে করিবে পাকিস্তানের সে গুড়েও বালি। দেউলিয়াকে আর কে ধার দিতে যাইবে, কেনই বা দিবে? যাহারা এতকাল পাকিস্তানকে আদর্যত করিয়া এমন বাড়াইয়াছে ইচ্ছা থাকিলে তাহদেরও তো পাকিস্তানের আবদার মেটানো কঠিন। বৃহৎ শক্তিদের মধ্যেই যে পাকিস্তানের বায়না মানিয়া লইতে চাহিবে তাহারই দেশে প্রবল আপত্তি উঠিবে। সাধ করিয়া ঝামেলাকে ডাকিয়া আনিবে? যাহার শূন্য তহবিল তাহার পক্ষে নগদ কড়ি দিয়া সামরিক সরঞ্জাম কেনা যেমন অসম্ভব, তেমনই অসম্ভব বিদেশ হইতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল কিংবা অন্যান্য উৎপাদনের আনুষঙ্গিক বস্তু কেনা। পূর্ব বঙ্গের সঙ্গে সহমরণে যাইতে চলিয়াছে পশ্চিম-পাকিস্তানের শিল্পও। বিদেশ হইতে কোনও কিছুই আমদানী করা যাইতেছে না, একে একে মিত্রের দলও হাত গুটাইতেছে। আরও দিন কতক এমনভাবে চলিলে পাকিস্তানের দুদর্শার চরম হইবে। বেকারি এমনিতেই তো ভয়াবহ। কলকারখানা কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের অভাবে যদি বন্ধ হইয়া যায় তাহা হইলে পশ্চিম-পাকিস্তানে তো হাহাকার পড়িয়া যাইবে। বিদেশ হইতে পাকিস্তানে যে বৈষয়িক সাহায্য আসে-এক